গাইবান্ধায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মারা যাওয়া ২ জনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাঘাটা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি গাইবান্ধা: গাইবান্ধায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করার পর মারা যাওয়া দুই ব্যক্তিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সাঘাটা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার রায় বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন মারা যাওয়া দুই ব্যক্তি সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দী গ্রামের সোহরাব হোসেন ওরফে আপেল (৩৫) ও শফিকুল ইসলাম (৪৫) এবং চিকিৎসাধীন সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ওরফে সুইট (৫৫), একই ইউনিয়নের বাঁশহাটা গ্রামের শাহাদত হোসেন (৪৫) ও উত্তর সাতালিয়া গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম (২৮)। রিয়াজুল চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের গাড়িচালক।

মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা প্রসঙ্গে মামলার বাদী এসআই দীপক কুমার রায় দাবি করেন, ওই দুই ব্যক্তি মারা যাওয়ার আগেই গতকাল সকালে আটক পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ইবনে মিজান বুধবার বিকেলে বলেন, মৃত ওই দুই ব্যক্তির নাম পরবর্তী সময়ে আসামির তালিকা থেকে বাদ যাবে। ইবনে মিজান আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের বাড়িতে অস্ত্র আছে—এমন খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালায়। এ সময় মোশারফ হোসেনসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। মোশারফের বাড়ি থেকে দেশি অস্ত্র ও ককটেলসদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহাদত হোসেনকে গতকাল রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত অপর দুজনের মধ্যে চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর রিয়াজুল ইসলাম বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ আসিফ বলেন, শাহাদত হোসেন আহত অবস্থায় গতকাল সকালে এখানে ভর্তি হন। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিন রাতেই তাঁকে রংপুরে পাঠানো হয়। অন্যদিকে, গতকাল দুপুরে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে মারা যাওয়া সোহরাব হোসেনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে মরদেহ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে সোহরাবের দাফন সম্পন্ন হয়।

এ ছাড়া বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শফিকুল ইসলামের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। সন্ধ্যা ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁর লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়নি।

হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮ থেকে ১০টি গাড়ি সাঘাটার গোবিন্দী গ্রামে চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের দোতলা বাড়ি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ডাকাডাকিতে বাড়ির গেট খুলে দেওয়ার পর তাঁরা চেয়ারম্যানের ঘরে ঢোকেন। সেখানে চেয়ারম্যান মোশারফ, মোশারফের ম্যানেজার শফিকুল ও তাঁর গাড়িচালক রিয়াজুলকে মারধরের পর আটক করা হয়। পরে আশপাশের এলাকা থেকে মোশারফের ভাতিজা সোহরাব ও কর্মী শাহাদতকে আটক করা হয়। ওই দুজনকে ব্যাপক মারধর করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্যাতনে সোহরাব ও শফিকুল মারা যান বলে অভিযোগ করেন স্বজনেরা। তবে অভিযানের সময় অসুস্থতার কারণে এই দুজনের মৃত্যু হয় বলে পুলিশ দাবি করে।

সোমবার গভীর রাতে তুলে নেওয়ার পর সোহরাব গতকাল দুপুরে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে এবং শফিকুল একই দিন সকালে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।