শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: ইমামুল মুরসালিন, খাতামুন নাবিয়্যন, হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বজগতের জন্য রহমত। আল্লাহ তাআলার ঘোষণা: ‘হে নবী (সা.)! আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭)।

আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘আল্লাহর রাসুল (সা.)–এর মাঝে তোমাদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম অনুকরণীয় আদর্শ।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ২১)।

নবী–রাসুলের মধ্যে অনেকে ছিলেন শুধু স্বগোত্রের জন্য। কেউ নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য, কেউ ছিলেন বিশেষ সময়ের জন্য।

আমাদের প্রিয় রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বকালের জন্য। সব স্থানের জন্য। সব মানুষের জন্য। তাই তিনি মহানবী ও বিশ্বনবী।

মহানবী (সা.) শ্রেষ্ঠ নবী হলেন সেরা গুণাবলির জন্য। ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, উদারতা, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, দয়া-মায়া, মানবিকতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, পরোপকার ইত্যাদি সব মানবীয় গুণের অনন্য সমাহার ছিল তাঁর মধ্যে।

তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। রাসুল (সা.)–এর ভালোবাসা ইমান পরিপূর্ণতার পূর্বশর্ত। নবীজির আনুগত্য, অনুকরণ ও অনুসরণই ভালোবাসার প্রমাণ।
আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমরা যদি আমার ভালোবাসা পেতে চাও, তবে আমার নবীর অনুসরণ করো, তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন ও তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)।

নবীজি (সা.) বলেন: ‘তোমাদের কারও ইমান পূর্ণ হবে না, যদি সে আমাকে তার পিতা, সন্তান ও সব মানুষ অপেক্ষা বেশি ভালো না বাসে।’ (বুখারি: ১৩-১৪)। তিনি আরও বলেন: ‘তোমাদের কারও ইমান পূর্ণতা পাবে না, যতক্ষণ না তার স্বভাব-চরিত্র ও আচার–আচরণ আমার আনীত আদর্শের অনুগামী হবে।’ (তিরমিজি)।

হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, ‘হে প্রিয় বৎস! যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তুমি এভাবে সকাল–সন্ধ্যা, রাত–দিন অতিবাহিত করো, যেন তোমার অন্তরে কারও জন্য কোনো হিংসা–বিদ্বেষ না থাকে।’ তিনি আরও বললেন, ‘হে প্রিয় সন্তান! এটা আমার সুন্নত বা আদর্শ। যারা আমার সুন্নতের অনুসরণ করে সে-ই প্রকৃত আমাকে ভালোবাসে, আর যে আমাকে ভালোবাসবে সে আমার সঙ্গেই জান্নাতে থাকবে।’ (মুসলিম: ২৩২৭)।

নবীর সঙ্গে উম্মতের সম্পর্ক বংশের নয়, দেশের নয়; আদর্শ ও বিশ্বাসের। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: ‘মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং সর্বশেষ নবী। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৪০)।

‘যারা ইমান আনে, সৎকর্ম করে এবং মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে, আর উহাই তাদের প্রতিপালক হতে প্রেরিত সত্য, তিনি তাদের মন্দ কর্মগুলো বিদূরিত করবেন এবং তাদের অবস্থা ভালো করবেন।’ (সুরা-৪৭ মুহাম্মদ, আয়াত: ২)।

আমাদের নবীজি (সা.) বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠ রাসুল এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব; তাই আমাদেরও হতে হবে বিশ্ব উম্মত এবং কালের শ্রেষ্ঠ মানুষ।

যার কর্মকাণ্ডে ধর্মের দুর্নাম হয়, ইসলামের বদনাম হয়; মহামানবের সম্মানহানি হয়, মানবতার অকল্যাণ হয়, সভ্যতার অমঙ্গল হয়; সে ধার্মিক নয় এমনকি মনুষ্য পদবাচ্য হওয়ারও অযোগ্য। আসুন, বিশ্বনবীর উম্মত হিসেবে শ্রেষ্ঠ গুণের অধিকারী হই, ইসলামের অনুপম আদর্শ বিশ্বের দরবারে কার্যত তুলে ধরি এবং মহানবী (সা.)–এর মর্যাদা সমুন্নত রাখি। আল্লাহ তাআলার বাণী: ‘আর আমি আপনার আলোচনা ও স্মরণ সমুন্নত করেছি।’ (সুরা-৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৪)।

তিনি ছিলেন ‘আস সুদুক’ অর্থ মহাসত্যবাদী, ‘আল–আমিন’ মানে বিশ্বস্ত ও বিশ্বাসী। সত্যতা, সততা, ন্যায়বিচার, নিষ্ঠা, বিনয়, নম্রতা, সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

লেখক: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম