রাজশাহীতে ছাত্রদের ওপর গুলির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল। বেলা ১১টার দিকে নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে এই কর্মসূচি শেষে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা রাজশাহীতে গত ৫ আগস্টের হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা বলেন, রাজশাহীতে শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু এই আন্দোলনে বারবার হামলা করেছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বাহিনী। আন্দোলন করায় কোনো শিক্ষার্থীরা বাসায় বা মেসে থাকতে পারেননি। তখন সব বাহিনীই শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারে উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু হামলাকারী একজনকেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি।

শিক্ষার্থীরা জানান, ৫ আগস্ট বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে নগরের আলুপট্টিতে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ হামলা চালায়। সেদিন আওয়ামী লীগ ও তাদের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করেন। সাকিব আনজুম নামের এক শিক্ষার্থীর গায়ে গুলি লাগলে তিনি লুটিয়ে পড়েন। পরে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ আগস্ট আলী রায়হান নামের আরেকজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তাঁর মাথায় গুলি লেগেছিল। এসব ঘটনায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা।

স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ও লাঠিয়াল বাহিনীর অংশ হয়ে এখানে যারা নিরীহ সাধারণ ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়েছে, বহু মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে, বহু মায়ের কোল খালি করেছে, সেই ঘৃণ্য সন্ত্রাসীরা আইন ও আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এখনো সদর্পে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের এমন নিষ্কৃতি ও বাধাহীন পথচলা জুলাই বিপ্লবের মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজশাহীতে ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত যেসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এর কোনো রূপ ব্যত্যয় ঘটলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন ফাহিম রেজা বলেন, এই জুলাই বিপ্লব রাজশাহীবাসীর রক্তে কেনা। এই রক্তের দাগ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে ছিল। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তাঁরা দেখেছেন নগর ভবনে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এটাকে মেয়র ক্যান্টনমেন্ট বানিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট বিজয়ের আগমুহূর্তে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ হামলা করে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। কিন্তু এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে।

ফাহিম আরও বলেন, ‘আপনারা যদি গ্রেপ্তার না করেন, এই ছাত্র-জনতা জড়িতদের ইঁদুরের গর্ত থেকে বের করে আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পোশাক পরতে সাহস পাচ্ছিল না। এই শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা দিয়েছেন। কিন্তু আপনারা এখনো কাজ করছেন না। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’