ইলিশ | ফাইল ছবি |
বিশেষ প্রতিনিধি: দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে এবার ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়ে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে সুপারিশ আসতে হয়।
আগামী ৮ অক্টোবর দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কোনো সুপারিশ করেনি। সুপারিশ পেলে রপ্তানিকারকদের নাম ও রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বা জিআই পণ্য হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে স্বীকৃত ইলিশ। টানা পাঁচ বছর ধরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করে আসছে বাংলাদেশ। যদিও ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ ছিল। ২০১৯ থেকে ভারতে আবার ইলিশ রপ্তানি চালু হয়। প্রায় প্রতিবছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাঁচ হাজার টন ইলিশের চাহিদার কথা জানিয়ে থাকেন ভারতের কলকাতার ব্যবসায়ীরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ চেয়ে আবেদন করেছে। পরে উপহাইকমিশন বিষয়টি বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিনের মাথায় গত ১১ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। ভারতে কোনো ইলিশ পাঠাতে পারব না। এটা দামি মাছ। আমরা দেখেছি যে আমাদের দেশের মানুষই ইলিশ খেতে পারে না। কারণ, সব ভারতে পাঠানো হয়।’
এর পর থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো কাজ করেনি বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। তা থেকে রপ্তানি যেটুকু হয়, তা খুবই সামান্য। এ কারণে দাম ও সরবরাহে খুব একটা প্রভাব পড়ে না বাজারে। মাঝখান থেকে আয় হয় ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার সমান বৈদেশিক মুদ্রা।
এই প্রতিবেদক অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে পূজা উপলক্ষে এবার ভারতে ইলিশ রপ্তানির কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার কাছ থেকে হালনাগাদ তথ্য নেওয়ার পরামর্শ দেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার গত রাতে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার কাছে অনুরোধ তো আসতে হবে। কেউ তো অনুরোধ করেনি। আর রপ্তানি করব না, এটা আমার মূল কথা না। মূল কথা হচ্ছে দেশের মানুষের ইলিশ খাওয়ার কথা আগে চিন্তা করা। সেই চিন্তাই করছি।’
উৎপাদনের তুলনায় রপ্তানি এত কম হয় যে বাজারে দামের দিক থেকে তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না—রপ্তানিকারকদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ফরিদা আক্তার বলেন, ‘অন্য দেশের কথা ভাবার বিষয় আমার নয়। তবে এটুকু জানি যে গতবার যত পরিমাণে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তত রপ্তানি হয়নি মূলত ইলিশের ঘাটতির কারণে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পূজার সময় সাধারণত দুই থেকে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। তবে প্রতিবছর রপ্তানি হয় অনুমোদন দেওয়ার অর্ধেকের মতো। কারণ, অনুমোদন দিলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানির সময়সীমা কম দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সময় দেওয়া হয় ১৫ দিন। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ইলিশ রপ্তানি করতে পারেন না।