কাশফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন দুই শিক্ষার্থী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নাসিম উদ্দিন: সাদা কাশফুলের মাঝে ছবি তোলার মুগ্ধতা নিয়ে এগিয়ে চলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা ইফফাত সুপ্তি। নিজের কিছু সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতে এসেছে তিনি। তবে, মনের মতো ছবির জন্য বারবার শট নিয়ে আবার তা ডিলিট করতে হচ্ছে, কারণ প্রত্যাশার মতো হচ্ছে না।
শরতের স্নিগ্ধতার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চিরন্তন। বরেন্দ্রভূমির তীব্র গরমকে পেছনে ফেলে কাশফুলের নরম হাওয়ায় মুগ্ধ হয়ে আছে রাজশাহীর পদ্মার পাড় এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাংলাদেশ বেতারের পুরাতন টাওয়ার এলাকা। সেই হাওয়ার স্পর্শ যেন সুপ্তির মনেও লেগেছে।
ভাদ্রের গুমোট শেষে আশ্বিনের বৃষ্টি নিয়ে এসেছে স্বস্তি। আর সেই বৃষ্টির পর নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো শুভ্র মেঘ যেন শরতের জীবন্ত একেকটি চিত্র এঁকে চলেছে।
সিল্কসিটির এই শরৎকাল যেন আরো জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়। শরতের প্রকৃতি রাজশাহীতে আসে অনন্য এক সৌন্দর্য নিয়ে। বর্ষার গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া এই ঋতুর প্রকাশিত রূপ সত্যিই মোহনীয়। শরতের সঙ্গে রাজশাহীর প্রকৃতির স্নিগ্ধতার এই সম্পর্ক যেন চিরায়ত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শরৎ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, 'আমার কাছে আমাদের শরৎ শিশুর মূর্তি ধরিয়া আসে। সে একেবারে নবীন। বর্ষার গর্ভ হইতে এইমাত্র জন্ম লইয়া ধরণী-ধাত্রীর কোলে শুইয়া সে হাসিতেছে। তার কাঁচা দেহখানি সকালে শিউলি ফুলের গন্ধটি সেই কচিগাঁয়ের গন্ধের মতো।'
আকাশের ক্যানভাসে ভেসে বেড়ানো মেঘের সাদা ছায়া যেন কাশফুলের রূপ নিয়ে মর্ত্যের বুকে নেমে আসে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এবং বাংলাদেশ বেতারের সম্প্রচার টাওয়ারের মাঠে সকাল বা বিকেলের মৃদু হাওয়ায় দুলছে কাশফুল। নদী-বেষ্টিত রাজশাহীর পদ্মার ধারেও দেখা মেলে এ ফুলের।
কাশবনে ঘুরতে আসা আফসানা সিফাত শিশির বলেন, 'কাশফুলের সাদায় শুভ্রতা ও স্নিগ্ধতা আছে। কাশফুল মানেই শরতের আগমন। এই ফুল দেখলেই মন অদ্ভুত এক আনন্দে ভরে ওঠে, তাই এখানে ঘুরতে এসেছি।'
যদিও কাশফুলের কোনো গন্ধ নেই, ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখার মতোও নয়, তবু দিগন্তছোঁয়া কাশবনের সৌন্দর্য মনকে আচ্ছন্ন করে। প্রেমিকের প্রেমিকার খোঁপায় এই ফুল গুঁজে দেওয়া যায় না, তবু এর মায়া মানুষকে ঘিরে ধরে।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফুলগুলোর মধ্যে কাশ অন্যতম। পৃথিবীর কোনো ঘাসজাতীয় উদ্ভিদের ফুল মানুষের মনে এমন প্রভাব ফেলেছে কি না, তা বলা কঠিন। বাংলা সাহিত্যে কাশফুলের উল্লেখও ব্যাপক।
শরতের কাশফুলের সঙ্গে লোকজ উৎসবেরও যোগ রয়েছে। এই সময়েই ঢাক-কাসারের শব্দে শুরু হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা, ছড়িয়ে পড়ে আনন্দের রেশ। তখন সবার মতোই দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেয় শুভ্র কাশফুল আর সাদা-কমলা শিউলি।