রামপুরা থানা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কবির হোসেন: ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সৃষ্ট সহিংসতা থেকে রেহাই পায়নি ডিএমপির রামপুরা থানা। গত ১৯ জুলাই বিকালে একটি পুলিশ ফাঁড়িসহ রামপুরা থানায় হামলা এবং থানার সামনে রাখা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ক্ষুব্ধ জনতা। ওই ঘটনায় পুলিশ শূন্য হয়ে পড়ে থানা। অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের পর থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার মাঝে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে রামপুরা থানা পুলিশ।

ডিএমপির বেশিরভাগ থানার বহুতল ভবন থাকলেও রামপুরা থানাটি সীমিত জায়গায় আধাপাকা টিনশেট ভবনে অবস্থিত। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, থানার সামনে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় রাস্তার ওপরেই গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। টিনশেটের ছোট ওই ভবনটিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

১৯ জুলাই ঘটে যাওয়া হামলা ও অগ্নিসংযোগের বিষয়ে এই থানার একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই দিন  বিকালে বনশ্রী ‘সি’  ব্লকে রামপুরা থানার পুলিশ ফাঁড়িতে একদল ক্ষুব্ধ মানুষ আগুন ধরিয়ে দিলে ফাঁড়ির ইনচার্জনসহ পুলিশ সদস্যরা গাড়ি ও অস্ত্র নিয়ে থানায় চলে আসেন। এরপর থানার সামনে পার্কিং করে রাখা টহল গাড়ি ও বিভিন্ন মামলায় জব্দ করা গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জনতা। তবে থানার মূল ভবনের কোনও ক্ষতি হয়নি বলে জানান তারা।

থানার কার্যক্রম শুরু হলেও মানসিকভাবে স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নাম প্রকাশ না করে থানার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এখনও তাদের মাঝে ভয় কাজ করছে। মানসিকভাবে কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছেন না। কেউ কেউ বদলি নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপপরিদর্শক (এসআই) জানান, যেকোনও সময় বদলির অর্ডার আসতে পারে। কোথায় যে বদলি করা হয়, তা নিয়ে টেনশনে আছেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ  উপপরিদর্শক (এসআই) নাদিম মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি বর্তমানে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই থানায় কর্মরত আছেন।

দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, রামপুরা থানায় উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) থাকার কথা ৩৯ জন, বর্তমানে আছেন ২০ জন। সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) ৩৩ জনের স্থলে রয়েছেন ২৫ জন। পাঁচটি টহল গাড়ির এখন সচল আছে তিনটি।

এদিকে থানার কার্যক্রম শুরুর পর বেড়েছে সেবাগ্রহীতাদের ভিড়। থানা এলাকায় চুরি, ছিনতাই, মারামারি, পারিবারিক কলহসহ বিভিন্ন অপরাধও বেড়েছে। প্রতিদিনই শত শত সেবাগ্রহীতা থানা ভিড় করছেন। রামপুরার মতো বিশাল এলাকায় সীমিত লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে এই থানার পুলিশ।

রামপুরা টিভি রোড এলাকা থেকে এসেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক বেসরকারি চাকরিজীবী। আপন ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে এসেছেন। কেউ নিখোঁজের ডায়েরি, কেউবা ছিনতাই ও চুরির ঘটনায়  থানায় এসেছেন অভিযোগ জানাতে।

রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, আমরা এখনও স্থিতিশীল হতে পারিনি। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, ভাঙা সংসার জোড়া লাগাতে একটু সময় তো লাগবেই।

গাড়ি সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় টহল দিতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সি আতাউর রহমান জানান, কর্মকর্তাদের বদলি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে— কেউ আসছেন, কেই যাচ্ছেন। আগে এই থানায় টহল গাড়ি ছিল ৫টি। বর্তমানে আছে ৩টি। ক্ষতিগ্রস্ত ৩টি গাড়ি মেরামতের কাজ চলছে। এসবের মাঝেই আমরা জনসাধারণকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। নিয়মিত টহলের কাজ অব্যাহত আছে। আমরা চেষ্টা করছি, পুলিশ সদস্যদের সাহস জোগাতে, তারা যেন সাধারণ মানুষদের কাছে কাঙ্ক্ষিত সেবা পৌঁছাতে পারে।

ওসি বলেন, আমরা আগের চেয়ে ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে লোকজন থানায় ভিড় করছেন। সেবাপ্রত্যাশীরা যেন কোনোভাবে অসন্তুষ্ট না হন, আমাদের কর্মকর্তাদের সেভাবেই কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে শতভাগ স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে।

প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে এবং শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সারা দেশে পাঁচশ’র বেশি থানায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ২২টি থানা রয়েছে।