নির্যাতনের শিকার দুই সাংবাদিক মাহমুদুন্নবী ও রবিউল ইসলাম | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি নওগাঁ: নওগাঁর পত্নীতলায় দুই সাংবাদিককে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন ক্লিনিক মালিক ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পর তাঁদের কাছ থেকে সাংবাদিকতা না করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার দুই সাংবাদিক হলেন দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক জয়পুরহাট বার্তার পত্নীতলা প্রতিনিধি মাহমুদুন্নবী এবং দৈনিক মানবকণ্ঠের পত্নীতলা প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম। গত শনিবার রাতে তাঁদের উপজেলার নজিপুর পৌরসভার জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে তুলে নিয়ে সিটি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।

ভুক্তভোগী মাহমুদুন্নবী বলেন, ‘গত শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে বগুড়া থেকে গীতা পরিবহনের একটি বাসে নজিপুর জিরো পয়েন্টে এসে নামি। নজিপুর বাজার এলাকায় সিটি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে একটি দোকানে বসে আমি চা পান করছিলাম। এ সময় সিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক ও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেওয়ান সবুর হোসেন আমাকে জোর করে সিটি ক্লিনিকের ভেতরে ধরে নিয়ে যান। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হারুন অর রশিদ, মনিয়ার হোসেন ও সাজেদুর রহমান, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক জুয়েল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত রহমান পারভেজসহ ৪০–৫০ জন এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। তাঁরা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং ‘আমি সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি করি এবং আর কোনো দিন সাংবাদিকতা করব না’ লেখা একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। পরে তাঁরা আমার গলায় জুতার মালা পরিয়ে ছবি তুলে ও ভিডিও করেন। একপর্যায়ে হারুন অর রশিদসহ কয়েকজন সাংবাদিক রবিউল ইসলামকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে আসেন। কিছুক্ষণ পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। তখন আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’

সাংবাদিক মাহমুদুন্নবীর বড় ভাই নূর নবী বলেন, ‘আমার ভাইকে মারধরের ঘটনায় সোমবার বিকেলে থানায় একটি অভিযোগ করেছি। থানায় ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) না থাকায় ডিউটি অফিসারকে অভিযোগের কপি দিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

নূর নবী আরও বলেন, ‘সম্প্রতি চিকিৎসক দেওয়ান সবুর হোসেনের করা অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসবের পর একজন নারী পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। আমার ছোট ভাই মাহমুদুন্নবী তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে এ বিষয়ে লাইভ করেন; যেখানে রোগী ও তাঁর স্বজনেরা বক্তব্য দেন। ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার কারণে চিকিৎসক সবুর ও ক্লিনিকের মালিকেরা আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে নির্যাতন করেছেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চিকিৎসক দেওয়ান সবুর হোসেন বলেন, ‘ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকপক্ষের লোকজন সাংবাদিকদের মারধর করে থাকতে পারেন। এর সঙ্গে আমি জড়িত নই।’

সিটি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক হারুন অর রশিদের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত আছেন বলে কল কেটে দেন। পরে  একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

থানায় অভিযোগ করার বিষয়টি অস্বীকার করে পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘সাংবাদিক নির্যাতনের খবর পেয়ে শনিবার রাত ১০টার দিকে সাংবাদিক মাহমুদুন নবী ও রবিউল ইসলামকে উদ্ধার করে আনা হয়েছিল। তবে ভুক্তভোগী ব্যক্তি বা তাঁদের পক্ষে এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ আমার কাছে দেওয়া হয়নি। অভিযোগকারীর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। কার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন, সেটাও জানি না। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’