জাতীয় সংগীত ও সংবিধান পরিবর্তনের দাবি আয়নাঘরফেরত আমান আযমীর

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আব্দুল্লাহিল আমান আযমী | ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও সংবিধান পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। ৮ বছর ‘গুম’ থাকার পর গত ৭ আগস্ট মুক্তি পান তিনি। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি নিজের অভিজ্ঞতা ও নানা ইচ্ছার কথা তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন করেন আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন তিনি। আমান আযমী বলেন, আমার বড় অপরাধ আমি অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে। আমি ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। গুপ্ত বন্দি থাকাকালীন আমাকে একজন বলেছেন, আপনি বিদেশি শক্তির গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। এই কারণে আমাকে বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে আপনি ভারতের বিরুদ্ধে সোচ্চার কেন?

তিনি বলেন, বারবার মনে হতো তারা হয়তো আমাকে ক্রসফায়ার করে হত্যা করবে।... যখন আমার বাসায় তারা আসে, তখন তাদের কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম– আপনারা কারা, পরিচয় কী, ওয়ারেন্ট আছে কিনা। তারা আমার কথার জবাব দেয়নি। আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

দীর্ঘ বন্দিজীবনে নানা শারীরিক জটিলতায় ভোগার কথা জানান তিনি।

একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা ও জাতীয় সংগীত প্রসঙ্গে কথা বলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমি এ জাতীয় সংগীত এই সরকারের ওপর ছেড়ে দিলাম। আমাদের এখন যে জাতীয় সংগীত রয়েছে সেটি আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের পরিপন্থি। এটা দুই বাংলা এক করার জন্য বঙ্গভঙ্গ রদের সময়কে উপস্থাপন করে। যে সংগীত দুই বাংলা এক করার জন্য করা হয় সেটা কীভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হতে পারে? এই সংগীত ১৯৭১ সালে ভারত আমাদের ওপরে চাপিয়ে দিয়েছিল। জাতীয় সংগীত করার জন্য অনেক গান রয়েছে। এই সরকারের উচিত একটা নতুন কমিশন গঠন করে একটি নতুন জাতীয় সংগীত তৈরি করা।

সংবিধানে কী ধরনের পরিবর্তন বা সংস্কার চান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধান পরিবর্তন করা একটা বিরাট ব্যাপার। সংবিধানে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে অন্যায় হলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নাই। এটা বাতিল করতে হবে। মানবাধিকার পরিপন্থি যত আইন আছে, এগুলো বাতিল করতে হবে। নতুন করে সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। দেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার আবেগের প্রতিফলন হতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ হচ্ছে একটি মুসলিম রাষ্ট্র। এখানে প্রায় ৯০ ভাগের বেশি মুসলমান রয়েছে। মুসলমানদের আল্লাহর আইনের বিরোধী কোনও সংবিধান থাকতে পারবে না। আমাদের সংবিধানে লেখা আছে জনগণ সার্বভৌমত্বের মালিক। কিন্তু জনগণ সার্বভৌমত্বের মালিক নয়। সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর আইনের বিরোধী কোনও আইন পাস হতে পারে না। সুতরাং সংবিধানে একটা আইন সংযোজন করে আমাদের মুসলিম চেতনার আইন করতে হবে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে তার মন্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান কোনও জরিপ ছাড়াই মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা প্রকাশ করেন। একটা যুদ্ধে কত মানুষ মারা গেলেন তার কোনও সঠিক সংখ্যা জাতি এখনও জানে না।

শহীদের সংখ্যা নিয়ে একটি জরিপ হয়েছিল উল্লেখ করে আযমী বলেন, একটা জরিপ হয়েছিল, যেখানে ২ লাখ ৮৬ হাজার শহীদের সংখ্যা জানা গেলেও শেখ মুজিবুর রহমান ৩ লাখ বলতে গিয়ে ৩ মিলিয়ন বলেন।   

রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, আমি এখনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছি। রাজনীতি নিয়ে আমি কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা করিনি। আমি দেশপ্রেমিক, আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই।

ট্রাইব্যুনালে আপনার বাবার সাজা হয়েছিল, সেই বিচার নিয়ে আপনার কোনও অবস্থান আছে কিনা বা পাল্টা কোনও ব্যবস্থা নেবেন কিনা– এমনটা জানতে চাইলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বলেছে এটা প্রমাণিত নয়, এটা মিথ্যা অপবাদ। আমরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিলাম, এই রায়টা বাতিল হয়েছে। এটা নিয়ে এখন কোনও কথা বলা অর্থহীন। আমি দৃঢ়ভাবে আবারও বলছি, অধ্যাপক গোলম আযম ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। উনার বিরুদ্ধে যা বলেছে সব ভারতের দালাল, এরা সব ভারতের র-এর বেতন পায়।  

বেআইনিভাবে আটকে রাখার ব্যাপারে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেবেন কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেনাপ্রধান নিজে একটা কমিটি করেছেন। তাদের সঙ্গে আমার চার ঘণ্টা কথা হয়েছে। অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাকে বলেছেন সত্য উদঘাটন করবেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই সেনাপ্রধান সত্য উদঘাটন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের ৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো নানা পদবিতে ভূষিত করার আহ্বান জানিয়েছেন আবদুল্লাহিল আমান আযমী।