খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সংঘর্ষের পর ঘরবাড়ি ও দোকানে আগুন দেওয়া হয়। বিকেলে লারমা স্কয়ারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি চট্টগ্রাম: খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে লারমা স্কয়ার এলাকায় এই সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দোকান ও ঘরবাড়ি আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্র জানায়, খাগড়াছড়ি শহরের নোয়াপাড়া এলাকায় গতকাল বুধবার ভোরে মোহাম্মদ মামুন (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় পরে তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামুন খাগড়াছড়ি সদরের শালবন মধ্যপাড়ার মৃত নূর নবীর ছেলে।
এ ঘটনার সূত্র ধরে আজ বিকেল পাঁচটার দিকে দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বাঙালিরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, পাঁচটার দিকে ৩০০ থেকে ৪০০ বাঙালি জামতলি ও বোয়ালখালী বাজারের দিক থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তাঁরা লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এতে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ার ও দীঘিনালা কলেজের পাশের প্রায় ৩৭টি ঘরবাড়ি ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
বোয়ালখালী বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. লোকমান হোসেন বলেন, মামুন হত্যার বিচারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে তাঁরা মিছিল বের করেছিলেন। পরে পাহাড়িরা এসে বাধা দিয়েছেন। এ জন্য ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। লোকমান বলেন, ‘এভাবে ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে, এটা ভাবিনি।’
লারমা স্কয়ার এলাকার বাসিন্দা রিপন চাকমা বলেন, মিছিলে পাহাড়িরা কেউ বাধা দেননি। মিছিল থেকেই অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে।
নিহত মামুনের মামা মো. নুর হোসেন জানিয়েছিলেন, মামুনকে পানখাইয়া পাড়ার স্লুইসগেট এলাকায় হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামুনের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
তবে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন মৃধা জানান, মোটরসাইকেল চুরি করে পালানোর সময় বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মামুন আহত হন। গণপিটুনির বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
এ ঘটনার পর গতকাল খাগড়াছড়ি শহরে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
সংঘর্ষ ও ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার বিষয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, আজ পানখাইয়াপাড়া প্রাইমারি স্কুলে শান্তি–শৃঙ্খলা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। মূলত গতকালের ঘটনার বিষয়ে ওই সভা ডাকা হয়। সভা চলাকালেই দীঘিনালায় সংঘর্ষের বিষয়ের তাঁর কাছে খবর পৌঁছায়। পরে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বর্তমানে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন।