ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সমতলের আদিবাসী ছাত্র-যুব ও সাধারণ জনগণ’এর ব্যানারে সমাবেশ হয়। ২১ সেপ্টেম্বর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: পাহাড় জ্বালিয়ে রেখে, দেশের জনগণের একাংশকে বঞ্চিত রেখে বৈষম্যবিহীন দেশ গড়া সম্ভব নয়। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সমস্যা দেশের রাজনৈতিক সমস্যা, শক্তিপ্রয়োগ না করে রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে।
শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সমতলের আদিবাসী ছাত্র-যুব ও সাধারণ জনগণ’–এর ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে বক্তারা এই দাবি করেন। চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মানুষদের বাড়িঘর ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও গুলিতে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ক্রীড়া শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম। এতে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্য রয়েছে দীঘিনালায় সহিংসতায় আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান; নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা; পার্বত্য এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ বিহারসহ সব দোকানপাট ও ঘরবাড়ির মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান; এই ঘটনায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত কমিশন গঠন করে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান; পার্বত্য তিন জেলার বাসিন্দাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
সভায় ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, দেশে বাঙালিদের মতো প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সমান নাগরিক অধিকার রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও সব নাগরিকের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে নতুন পরিস্থিতিতে আমরা যে বৈষম্যবিহীন দেশের প্রত্যাশা করেছি, দেশের একাংশকে বাদ রেখে সেই বৈষম্যবিহীন দেশ ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য এলাকায় সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই আবার সেখানকর বাসিন্দাদের মানবসৃষ্ট দুর্যোগকবলিত হতে হয়েছে। তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। বহু বছর থেকেই তাদের ওপর এমন সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। সব ঘটনা গণমাধ্যমে আসে না। এই সহিংসতার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
রিপন চন্দ্র বানাই বলেন, ‘আমরা বিচ্ছিন্নবাদী নই। আমরা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার দাবি করছি। কিন্তু সমস্যা জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এভাবে শান্তির প্রত্যাশা করা যায় না।’
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপ্তি দত্ত বলেন, ‘আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের আকাঙ্ক্ষার কথা বলছি, কিন্তু সমাজের বিভিন্ন রকমের বৈষম্য টিকিয়ে রেখেছি। পাহাড়ে হত্যা-নির্যাতন চলছে কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। মানবিক সমাজ গড়তে হলে মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে উজ্জ্বল আজিম ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে এক অপরাজনীতি চলছে। একটি মহল শান্ত পাহাড়কে অশান্ত করে তুলছে। সেখানে রক্ত ঝরছে, আগুন জ্বলছে। এই নিষ্ঠুর খেলা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে শান্তি আসবে না। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে আমরা যে শান্তির স্বপ্ন দেখেছি, বৈষম্যমুক্ত দেশের স্বপ্ন দেখেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন লিয়াং রিছিল, হিরন্ময় চাকমা, ডন যেত্রা, জানকী চিসিম, রুবেল চাকমা, আন্তনী রেমা, অনিক প্রু, সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকলি ইসলাম প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য ও দাবিনামা পাঠ করেন অনন্যা দ্রং। সঞ্চালনা করেন টনি চিরান। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। বিভিন্ন দাবি নিয়ে স্লোগান দিয়ে মিছিলটি শাহবাগ মোড় ঘুরে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়।