সাদিয়া আয়মান | কোলাজ |
বিনোদন প্রতিবেদক: দুদিন ধরে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে বেদম তুলোধুনো হচ্ছেন উঠতি অভিনেত্রী সাদিয়া। তারও দুদিন আগে একটি রিলসের সূত্র ধরে হয়েছেন ভাইরাল। তবে প্রথমটা ভক্তদের পক্ষ থেকে হলেও শেষটা হলো তারই সহকর্মীসম বিনোদন সাংবাদিক ও সহশিল্পীদের তরফে।
অভিযোগ উঠেছে, তিনি দেশের শীর্ষ একটি পত্রিকার একজন জ্যেষ্ঠ বিনোদন সাংবাদিকের নামে রীতিমতো মিথ্যাচার করেছেন সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। ঘটিয়েছেন চূড়ান্ত মানহানি। এমনকি সেই সাংবাদিকের প্রতিষ্ঠানেও অভিযোগ দিয়েছেন। অফিস উক্ত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সেই খবরও তিনি তার পাবলিক পোস্টে অবহিত করেছেন পুরো জাতিকে!
২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে সাদিয়ার পক্ষ থেকে ঘটা এমন বিস্ফোরক কাণ্ডে বিস্মিত হয়েছে শিল্পী থেকে সাংবাদিক প্রায় সবাই। কারণ যে সাংবাদিকের নামে তিনি যে অভিযোগটি তুলেছেন, সেটির কোনও যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি বেশিরভাগ মিডিয়াকর্মী। মাত্র ৫ বছর অভিনয় জীবনের অভিনেত্রী ৩০ বছরের ক্যারিয়ারসমৃদ্ধ একজন সাংবাদিকের নামে এভাবে প্রকাশ্যে কুৎসা রটাতে পারেন কিনা, প্রশ্ন উঠেছে সেটিও।
মূলত দুদিন ধরে ঘুরেফিরে এই প্রশ্নগুলোই দানা বেঁধেছে মিডিয়ার সোশ্যালে ও মুখে। যেটাকে বাংলায় বলা যেতে পারে তুলোধুনো। কারণ বিতর্কটি ছড়িয়ে সাদিয়া নিজে যতটুকু পরিচিতি নিয়েছেন, তারও বেশি ধিক্কৃত হচ্ছেন এখন।
২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্ট্যাটাসে তরুণ অভিনেত্রী অভিযোগ করেন, মাইক্রোফোন ঠিক করার সময় অনুমতি ছাড়া গোপনে তার ভিডিও ধারণ করেছেন ওই সাংবাদিক! এরপর তার অনুরোধে ভিডিওটি ফেসবুক থেকে মুছেও ফেলেছেন সেই সাংবাদিক। তবে তার আগেই ভিডিওটি কপি করে নিজ নিজ দেয়ালে প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাই নয়, ভিডিওটিকে আপত্তিকরভাবে তুলে ধরেছেন অনেক নেটিজেন কিংবা সাদিয়া-ভক্তরা!
এদিকে ভিডিওতে দেখা গেলো, সাদিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ভিডিওটি ধারণ করেছেন অভিযুক্ত সাংবাদিক। এরপর সেটি রিলস হিসেবে প্রকাশ করেছেন নিজের ফেসবুকে। ফলে সাদিয়া ‘অনুমতি’ বিষয়ে যে অভিযোগ তুলেছেন সেটি প্রায় মিথ্যা।
অভিযোগকারী অভিনেত্রী ১ ঘণ্টার মাথায় আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে তিনি স্বস্তি প্রকাশ করেন। জানান, ওই সাংবাদিকের চাকরি চলে গেছে!
মূলত মিষ্টি সাদিয়ার এই একঘণ্টার বিধ্বংসী ফেসবুক ইনিংস দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন মিডিয়াকর্মীরা। বিশেষ করে বিনোদন সাংবাদিক কমিউনিটি এর প্রতিবাদে তুলোধুনো করে চলেছেন। তাতে অংশ নিয়েছেন নির্মাতা-অভিনয়শিল্পীদের অনেকে। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে এর মধ্যে তুমুল আপত্তি প্রকাশ করা হয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘেও।
সাদিয়ার এমন প্রতিবাদে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী সুরকার তানভীর তারেক দীর্ঘ এক প্রতিবাদলিপির মাধ্যমে অভিশাপ দিয়েছেন অভিনেত্রীর এমন কাণ্ডের প্রতি। তার ভাষায়, ‘বিধাতা নিশ্চয়ই স্ব-স্ব মহাজন/জোকার/জয়কারীদের এই অভিশাপগুলো কার্যকরীভাবে বণ্টন করে দেবেন।’
ডেইলি স্টারের বিনোদন সাংবাদিক ও গীতিকার জাহিদ আকবর লিখেছেন, ‘যেটা একসঙ্গে বসে সমাধান করা যেত, সেটা চলে আসলো ফেসবুকে। সাংবাদিক-শিল্পী পাশাপাশি হাত ধরে থাকেন এই মিডিয়ায়। সেই পরিবেশে এতোটা কেন হলো ঠিক বোঝা গেলো না। দোষগুণ নিয়েই তো মানুষ হয়। হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। সবকিছু সুষ্ঠুভাবে দেখার চেষ্টা হোক, এটা আশা করবো।’
চ্যানেল ২৪-এর বিনোদন বিভাগের প্রধান নাজমুল আলম রানা লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি শিল্পী আর বিনোদন সাংবাদিক একে অপরের পরিপূরক। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় নিয়ে যা হচ্ছে, তা মোটেও মেনে নেয়ার মতো না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’
একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার বুলবুল আহমেদ জয় তার ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘মুখে শিল্পী বললেও কর্মে তার প্রকাশ নেই।’ নায়িকার অভিযোগটি যে একেবারেই ভিত্তিহীন, তা সরাসরি বলেন তিনি।
অন্যদিকে যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আহমেদ তাওকীরের প্রশ্ন, ‘নায়িকা অভিযোগ করলেন আর সে অভিযোগ আমলে নিলো সাংবাদিকের অফিস...!’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি ছিল বলেও মনে করেন তিনি।
কালবেলার বিনোদন বিভাগের প্রধান এ এইচ মুরাদ লিখেছেন, ‘অথচ আমরা সবসময় শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বিষয়টির সুন্দর সমাধান হতে পারত।’
প্রতিবাদ জানিয়ে রাইজিং বিডির সিনিয়র রিপোর্টার রাহাত সাইফুল বলেন, ‘শিল্পীদের পাশে সবসময় সাংবাদিক থাকেন। একই অঙ্গনে চলতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। তার সুন্দর সমাধানও হবে। কিন্তু যা হয়েছে তা কাম্য নয়।’
নিউজ টোয়েন্টিফোরের ফাতেমা কাউসারের দাবি, ‘ভাইরালের নেশায় এমনটা করেছেন সাদিয়া আয়মান।’ অন্যদিকে আরেক নারী সাংবাদিক মেহনাজ স্ট্যাটাসে ঘোষণা দেন, নিজের সম্মান হারানোর ভয়ে তিনি কখনোই উঠতি এই নায়িকার সাক্ষাৎকার নেবেন না। একই সিদ্ধান্তের কথা ফেসবুকে জানান বাংলা ভিশনের রিপোর্টার হাসনাত জুবাইর।
দৈনিক সমকালের বিনোদন সম্পাদক অনিন্দ্য মামুন দীর্ঘ প্রতিবাদলিপিতে লেখেন, ‘অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের ভিডিওটা দেখলাম। সেখানে কোনও অশ্লীলতা বা তাকে হেয় করার মতো দৃশ্য দেখিনি। তিনি শাড়ি পরা ছিলেন। এই শাড়ির কারণে ওনাকে যেভাবে দেখাচ্ছে সব নারীদেরই তেমনটি দেখায়। এখন এই ভিডিও থেকে কিছু অংশ কেটে জুম করে বা স্ক্রিনশট নিয়ে সেটা ভাইরাল করে দিয়েছেন কেউ। তাতে কি করার থাকে। বিষয়টি নিয়ে সাদিয়া আয়মান যেভাবে লিখলেন তা সত্যিই অবাক করা বিষয়। আরও একটা গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন সাদিয়া, এটি নাকি গোপনে ভিডিও করে প্রকাশ করা হয়েছে। সম্ভবত এখানেও তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। ভিডিওটি দেখলে যে কেউ বুঝবে এটি গোপন ক্যামেরায় বা গোপনে করা ভিডিও নয়। এতে বেশ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল সাদিয়া আয়মানের।’
এদিকে সাদিয়ার এমন কাণ্ডে শুধু বিনোদন সাংবাদিকরাই তুলোধুনো করছেন না, যুক্ত হয়েছেন নির্মাতা-শিল্পীরাও। কেউ সরাসরি, কেউ ইশারায়। অভিনেত্রী শ্রাবন্তী পুরো বিষয়টিকে একটা দুর্ঘটনা মনে করে অভিযুক্ত সাংবাদিকের পাশে দাঁড়িয়ে লিখেছেন, ‘তিনি এমন মানুষ নন।’
অভিনেত্রী তাসনুভা তিশাও এ ঘটনায় সাংবাদিকের পক্ষ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাদিয়ার আচরণে।
এদিকে অভিনেতা মিশা সওদাগর লিখেছেন, সাংবাদিক এবং শিল্পী একে অপরের পরিপূরক। ছোটখাটো ভুলত্রুটি সংশোধন করে নেওয়াই ভালো বলে মনে করেন তিনি। তার ভাষায়, ‘সাংবাদিক এবং শিল্পী, একে অপরের পরিপূরক। তাই সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। ছোটখাটো ভুলত্রুটি সংশোধন করে নেওয়াই ভালো।’
একজন শিল্পীর মন আকাশের মতো হওয়া উচিত বলে মনে করেন, চিত্রনায়ক জিয়াউল রোশান। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘এরকম একটা লেইম এবং ছোট ইস্যুতে একজন সম্মানীয় সাংবাদিককে ছোট করার মোটিভ থাকাটা কখনোই একজন শিল্পীর শোভা পায় না।’
নির্মাতা অনন্য মামুন বলেন, ‘আলোচনা করে সুন্দর সমাধান করা যেতো। অবশ্য আমরা এখন নায়িকাদের স্ট্যাটাস দেখেই সব সিদ্ধান্ত নেই।’ শেষে অভিযুক্ত সাংবাদিকের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে ‘দরদ’ নির্মাতা বলেন, ‘আপনার সাথে যা হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে বলবো সেটা অন্যায়। আর আমার সাথে যা হয়েছে সেটা ভয়ংকর অন্যায়।’
এদিকে বিনোদন সাংবাদিকতায় এই সময়ের অন্যতম জ্যেষ্ঠ তুষার আদিত্য বলেন, ‘অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মানের ভিডিওটা দেখলাম। শরীরে বুম (মাইক্রোফোন) লাগানোর সময় তার স্পর্শকাতর স্থান দেখা যাচ্ছিল। ধরে নিলাম অনুমতি ছাড়া ভিডিও ধারণ করে অন্যায় করেছে, ভিডিও পাবলিশ করেও ভুল করেছে। এরপরেও কিন্তু এটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধান করা যেতো। সাদিয়া আয়মান এটাকে এতো বড় ইস্যু না বানালেই বোধহয় জিনিসটা ভালো হতো।’
এদিকে সাদিয়া আয়মান বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে তাকে আজীবন বয়কটের ডাক আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন একাধিক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সংগঠন।
বলা দরকার, সাদিয়া আয়মানের এক ঘণ্টায় দুই বিস্ফোরক পোস্টে পুরো মিডিয়ায় আগুন ধরে গেলেও তীরবিদ্ধ সাংবাদিক কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি এখনও।