বৃহস্পতিবার দুপুরের বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে পলিথিন মুড়িয়ে রিকশায় এক যাত্রী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আশ্বিনের মাঝামাঝিতে দেশে ভারি বৃষ্টি হতে পারে; যাতে তাপমাত্রা কমে আসবে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সংস্থাটি বলছে, রোববার পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়বে; এর পর থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।

শনিবার আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, '৩০ তারিখ থেকে কোথাও কোথাও বৃষ্টি বাড়বে। ১ অক্টোবর থেকে সারাদেশেই বৃষ্টি বাড়বে। সেটা ৩-৪ দিন স্থায়ী হবে। তবে উত্তরবঙ্গে সারা সপ্তাহ বৃষ্টি থাকতে পারে।'

আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বৃষ্টি হতে পারে।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।

ঢাকার রামপুরায় বৃহস্পতিবার দুপুরের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে বেহাল অবস্থা হয় অনেকের | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এছাড়া নীলফামারীর ডিমলায় ৪৫, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৩৪ ও সিলেটে ২০ মিলিমিটারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয় অতিভারি বৃষ্টিপাত।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে বলে আভাস এসেছে।
লঘুচাপের কারণে বৃহস্পতিবার দুপুরের ঝুম বৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাকায় অনেককে বৃষ্টি উপভোগ করতে দেখা যায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে, বন্যার ঝুঁকি নেই
ভারি বৃষ্টির কারণে বাড়তে থাকা নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে, দেশে বন্যার ঝূঁকি নেই বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান শনিবার বলেন, 'রোববার থেকে পানি কমতে থাকবে। আমাদের দেশের বৃষ্টির পানিটা নেমে গেছে, উজানের পানিটা এখনো আছে। তবে বন্যার ঝুঁকি নেই।'

শনিবার কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়ছে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
 
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, রংপুর বিভাগ ও এর সংলগ্ন উজানে অতি ভারি বৃষ্টির প্রবণতা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়তে পারে এবং পরের দুই দিন কমতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে চরাঞ্চল ও কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

এর পরের দুই দিনে তিস্তা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হতে পারে। অন্যদিকে আগামী তিনদিন কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

আর রংপুর বিভাগের আপার করতোয়া, আপার আত্রাই, টাঙ্গন, পূণর্ভবা, ইছামতি-যমুনা, ঘাঘট ও যমুনেশ্বরী নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টা রংপুর বিভাগের এসব নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুইদিনে নদীর পানি কমতে পারে।

রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদী ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী একদিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বাড়তে পারে এবং পরবর্তী চার দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

পূর্বাভাস কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়, রাজশাহী বিভাগের গঙ্গা নদীর পানি কমছে ও তার ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী দুই দিন গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি ধীর গতিতে কমতে পারে। পরবর্তী একদিন পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুইদিন বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
 
রাজশাহী বিভাগের করোতয়া, আত্রাই, বাঙ্গালী ও ছোট যমুনা নদীর পানি বাড়ছে, অন্য দিকে মহানন্দা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী বিভাগের এসব নদীর পানি বাড়তে পারে, যা পরবর্তী একদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী একদিন নদীর পানি কমতে পারে।

বন্যার বুলেটিন বলছে, সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন দিন নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

মনু, খোয়াই, ধলাই, ভুগাই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমছে, অন্য দিকে সারিগোয়াইন ও কংস নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী একদিন এসব নদীর পানি কমতে পারে এবং পরবর্তী দুইদিন নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী, গোমতী নদীর পানি কমছে, অন্য দিকে সাঙ্গু নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় এসব নদীর পানি কমতে পারে।

বুলেটিনে বলা হয়েছে, এর পরের দুই দিন চট্টগ্রাম বিভাগ ও এর সংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। যার ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, গোমতী ও ফেনী নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। অন্য দিকে হালদা, মাতামুহুরী ও সাঙ্গু নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।