দেশে মাজারসহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনায় হামলার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করে একতার বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১১ সেপ্টেম্বর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাজার ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনায় হামলাকারী ব্যক্তিরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই আচরণ করছেন। কোনো বিবেকবান মানুষ এমন অপরাধ ও অন্যায়কে সমর্থন করেন না। অবিলম্বে হামলাকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি জানান। সারা দেশে মাজার ও ধর্মীয় স্থাপনায় হামলার প্রতিবাদে ও বাংলাদেশে বিদ্যমান ধর্মীয় বহুত্ববাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে একতার বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন।

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাংলার কোনো বিবেকবান মানুষ এমন গর্হিত অপরাধ ও অন্যায়কে সমর্থন করেন না। যাঁরা এ ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদের কোনো ধর্মবোধ আছে বলে বিশ্বাস করি না।’ মাজার থেকে শুরু করে অন্য ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ে যাঁরা আক্রমণ করছেন, তাঁদের কোনো ধর্ম নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘সমাজে অসম্প্রীতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় যাঁরা লিপ্ত আছেন, তাঁদের সতর্ক করতে চাই, বাংলার হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা যাবে না। এসব কাজ করে কেউ রেহাই পাবেন না। অন্যায়কারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’

বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, সৃষ্টিকর্তা চাইলে সবাইকে একই জাতি, গোত্র ও ধর্মের করে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সৌন্দর্য ও ভারসাম্য রক্ষায় সবাইকে আলাদা করে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকর্তার এ সৃষ্টিকে অস্বীকার করলে স্রষ্টাকেই অস্বীকার করা হবে।

আবদুল্লাহ আল মাহমুদ আরও বলেন, ‘মাজার দেশে আজকে তৈরি হয়নি। কোনোটি শত বছরের, কোনোটি আবার হাজার বছর আগের। অতীতে এসব মাজারে এমন ধ্বংসলীলা ও তাণ্ডব দেখা যায়নি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে মাজার, মন্দির ও ধর্মের উপাসনালয়কেন্দ্রিক যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, এর তীব্র নিন্দা জানাই।’ সরকারের কাছে মাজারে হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক সাফি মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, বাংলায় সুফিদের হাত ধরে, মুসলিম শাসক আসার ৩০০-৪০০ বছর আগে থেকেই সুফিরা ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে সুফিদের অবদান অনেক। যাঁরা মাজার ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা করছেন, তাঁরা ইসলামের ইতিহাস না জেনে করছেন। মাজারে হামলার ঘটনা ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই আচরণ।

মানববন্ধনে লেখক তামিম মুনতাসির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক খান মাহবুব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অমিও ভৌমিক বক্তব্য দেন।