৬৯ জন পদত্যাগের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে অচলাবস্থা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | ফাইল ছবি

প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: প্রায় দেড় মাস ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক, প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে সব কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা চলছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বর্তমান প্রশাসনের অন্তত ৬৯ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। গত সপ্তাহ থেকে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা হলে ফিরতেও শুরু করেছেন। তবে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর ব্যাপারে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ রোববার খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সর্বশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আচার্য ও রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা পাওয়ার পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার, সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ও হুমায়ূন কবীর, প্রক্টরিয়াল বডি, ১০টি হলের প্রাধ্যক্ষসহ একের পর এক প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। প্রশাসনিক দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করায় কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা এলেও কর্তৃপক্ষ না থাকায় সিদ্ধান্তটি এখনো ঝুলে আছে।

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের কর্তৃপক্ষ আজ থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মোহা. জামিরুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে একটি ব্যাচের শুভেচ্ছা ক্লাস নিয়েছেন।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসেননি। তবে শুভেচ্ছা ক্লাস শেষে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মোহা. জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছেন। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস থেকে দূরে আছে। তাদের একাডেমিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া যেহেতু ডিন, চেয়ারম্যান মহোদয়রা পদত্যাগ করেননি, তাই শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে আজ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শুভেচ্ছা ক্লাস নিয়েছি। ক্লাসে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। আশা করছি দ্রুত সবাই ক্লাসে ফিরবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা হলে ফিরতে শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ১১টি ও ছাত্রীদের জন্য ৬টি আবাসিক হল আছে। হল ফটকের নিবন্ধন খাতা ও নিরাপত্তাপ্রহরী সূত্রে জানা গেছে, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে শিক্ষার্থী এসেছেন ১৪৮ জন, শহীদ হবিবুর রহমান হলে ১৫০ জন, শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ১৬০ জন, মাদার বখ্শ হলে ১৪০ জন, শাহ মখ্দুম হলে ১২০ জন ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হলে ৮১ জন শিক্ষার্থী এসেছেন। অন্যান্য হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এ রকম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য দপ্তর, জনসংযোগ দপ্তর, অর্থ ও হিসাব দপ্তর, সহ-উপাচার্যের দপ্তরসহ সব কটি অফিস খোলা আছে। তবে শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করায় কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ না করলেও তাঁরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত অফিসে আসেননি। রেজিস্ট্রার অধ্যাপক তারিকুল হাসানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফিরছেন। অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান, শিক্ষকেরা তো স্বপদে বহাল আছেন, তাই ক্লাস শুরু করা যেতেই পারে। এ ছাড়া দ্রুত উপাচার্যসহ অন্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনিক কাঠামো ফিরিয়ে এনে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আহ্বান জানান তাঁরা।