যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে তাঁরা ‘ধর্ষকের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ উই ওয়ান্ট জাস্টিস, নো মোর রেপিস্ট’, ‘জুবেরীর ধর্ষণ সেল, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত সাতজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন। এ ছাড়া যৌন নিপীড়নের সঙ্গে যারা অভিযুক্ত, তাদের তালিকা তৈরি করে প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোর বিচার ও ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। সমাবেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির শিকার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়।

এর আগে আজ সকালে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষকের নাম ও ছবি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা হয়। অভিযোগের সত্যতা জানতে সাংবাদিক পরিচয়ে সেই আইডিতে খুদে বার্তা পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত চৌধুরী বলেন, ‘যারা যারা যৌন নিপীড়ন করত, তাদের মুখোশগুলো উন্মোচন হতে শুরু করেছে। এই অভিযোগগুলো কিন্তু নতুন নয়। শিক্ষকরা জাতির বিবেক, তারা আমাদের বাবার মতো। তারা যদি আমাদের বোনদের যৌন নিপীড়ন করে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় সভ্যভাবে দাঁড়াতে পারবে না। যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো আসছে, তাদের প্রত্যেকেরই পেছনে দলীয় চেয়ার ও ক্ষমতা ছিল। শিক্ষকদের ক্ষমতা মানেই হলো দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র–শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারী রাজনীতি থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদেরই নিতে হবে।’ যৌন নিপীড়নের সঙ্গে যারা জড়িত, শিগগিরই তাদের তালিকা তৈরি করে প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোর বিচার ও ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক মেহেদি হাসান বলেন, ‘আমরা ১৬ বছরের স্বৈরাচার তাড়িয়েছি। কিন্তু এই ১৬ বছরে গণভবন থেকে ধর্ষক লীগ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী তৈরি হয়েছে। আমরা তাদের ছাড় দেব না। এই সাপগুলো বাইরে রেখে আমরা ঘুমাতে যাব না। সব সাপকে বিচারের আওতায় আনা হবে। একটা মানুষ কিছুই না করলে এত অভিযোগ আসে না। কোনো স্বৈরাচারের দোসর ও ধর্ষকের ঠিকানা এই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে না।’

সংক্ষিপ্ত সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী সজীব। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।