শিক্ষার্থী আটকের খবর পেয়ে মতিহার থানায় হাজির হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বুধবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে আজ বুধবার দুপুরের দিকে আটক করেছে পুলিশ। আটক শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নিতে থানায় অবস্থান করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। বুধবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পুলিশ এই পাঁচ শিক্ষার্থীকে ছাড়েনি।

পুলিশ ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার দুপুরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সৈয়দ সামিউল বাসিত ও মাজেদ হাসান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম ইসলামকে আটক করে পুলিশ। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরের মহিষবাথান এলাকা থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত হাসান এবং আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যয়কে আটক করা হয়। এদের মধ্যে সামিউল বাসিত, মাজেদ হাসান ও নাইম ইসলামকে মতিহার থানা-পুলিশ, প্রত্যয়কে রাজপাড়া থানা-পুলিশ এবং রিফাত হাসানকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে।

শিক্ষার্থী আটকের খবর জানাজানি হলে বিকেলের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা থানায় ছুটে যান। সন্ধ্যার দিকে শিক্ষকদের সংখ্যা থানাগুলোতে বাড়তে থাকে। মতিহার থানায় আটক ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে অবস্থা করছেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রোবাইদা আখতার, ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, আ-আল মামুন, সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিব জাকারিয়াসহ অন্তত ২০ জন। ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। রাজপাড়া থানায় অবস্থান করছেন আইন বিভাগের সভাপতি সাঈদা আঞ্জুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক রাতে বলেন, তাদের পাঁচ শিক্ষার্থীকে এখনো ছাড়েনি পুলিশ। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। শিক্ষার্থীদের ছাড়াতে থানায় শিক্ষকেরা অবস্থান করছেন। তারা খোঁজখবর রাখছেন।

এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদারকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। থানার ওসিরাও ফোন ধরেননি। তবে সন্ধ্যার আগে নগরের মতিহার থানার ওসি শেখ মো. মোবারক পারভেজ বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, তিনি ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছেন। তিনি কথা বলেছেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তারা বলেছে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেবে।

ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক রোবাইদা আখতার বলেন, শিক্ষার্থীদের সবকিছু চেক করেছে তারা। তাদের শিক্ষার্থীর ব্যাপারে পুলিশ খুবই ইতিবাচক। তারা বলছে কিছু ‘ফরমালিটিস মেইনটেন’ করে ছেড়ে দেবে।

আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সাঈদা আঞ্জু বলেন, তারা এখনো থানায় আছেন। বেশ কয়েকজন শিক্ষকও এসেছেন। পুলিশ এখনো কিছু বলছে না।

‘হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে’ বুধবার সারা দেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণার অংশ হিসেবে রাজশাহীর শিক্ষার্থীরাও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নেয়। কোর্ট এলাকাতেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে পারেনি। এর মধ্যে তিনটার দিকে কোর্ট এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।