প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার অভিযোগে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য গালিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের ৭১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে শহরের শৈলপাড়া এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে যুবদলের কর্মী নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার হননি।
মামলার এজাহারে বাদী নজরুল ইসলাম উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঈশ্বরদীতে ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে গত ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর এলাকার পশ্চিমটেংরি কাচারিপাড়া আলহেরা জামে মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায় জমায়েত হলে আসামিরা পর পর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে জনমনে আতঙ্ক, ভীতিকর ও ত্রাসের অবস্থা সৃষ্টি করে তারা। জীবন বাঁচানোর জন্য ছোটাছুটি করলে আসামিরা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালায়। তাঁর বাম পায়ে গুলি লাগে।
তিনি মামলায় আরও উল্লেখ করেন, ‘একইভাবে রাশেদুল ইসলাম রিপনের ওপর হামলা চালিয়ে আহত ও গুলিবিদ্ধ করা হয়। আসামিরা এ সময় বাদী নজরুল ইসলামকে গলার ওপর পা চেপে রেখে লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং তাঁর পকেট থেকে ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে তাদের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ
সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান মিন্টু, ঈশ্বরদী পৌরসভার
মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইছাহক আলি মালিথা, উপজেলা
চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদার, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান,
উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শিরহান শরীফ তমাল, পৌর যুবলীগ সভাপতি আলাউদ্দিন
বিপ্লব, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম লিটন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি
রাকিবুল হাসান রনি, পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি আবির হাসান শৈশব, উপজেলা
স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন সজীব মালিথা, পৌরসভার
কাউন্সিলর আবুল হাশেম, আব্দুল লতিফ মিন্টু ও কামাল হোসেনসহ দলের বিভিন্ন
পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মামলা আসামি। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৭০-৮০ জনকে
আসামি করা হয়েছে।
পৌর যুবদলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন জুয়েল বলেন, ‘বিএনপির দুর্গ ঈশ্বরদীতে যাঁরা এত দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, বিএনপির শত শত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে, ছাত্র আন্দোলন দমাতে যাঁরা হামলা ও হত্যায় ইন্ধন দিয়েছে, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে একটি মামলা হয়েছে।’
মামলার বাদী নজরুল ইসলাম বলেন, 'আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা শহরের অস্ত্রের মহড়া দিয়েছেন, গুলি ছুড়েছেন। এতে অনেক প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। সবাই দৌড়ে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এর সঠিক বিচার হওয়া প্রয়োজন। তাই মামলাটি করেছেন।'
হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো খুদে বার্তায় পাবনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ গালিবুর রহমান
শরীফ বলেন, ‘আমি কখনো কারও সঙ্গে অমানবিক আচরণ করিনি। শুধু রাজনীতির কারণে
আমার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ন্যায় ও
সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করছি।’
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, 'মামলাটি নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের
গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা
সম্ভব হয়নি।'
এদিকে এর জের ধরে পরদিন ৫ আগস্ট সকালে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন
বিক্ষুব্ধ যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। এসময় শহরে স্টেশন রোড
উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এবং পোস্ট অফিস মোড়ে
উপজেলা যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক কার্যালয় ভাঙচুর করেন যুবদলের নেতাকর্মীরা।