রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনা আবেদীনকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। তাঁকে তাঁর কক্ষে অবরুদ্ধ করেও রাখা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনা আবেদীনকে মারধর করে পদত্যাগের কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, অধ্যক্ষ আমিনা আবেদীনের স্বামী ও ছেলেকে মারধর করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কলেজে এ ঘটনা ঘটে।

মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা এবং ওই কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হকের (লিমন) বিরুদ্ধে এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বেশ কিছু শিক্ষার্থী আজ সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে জড়ো হন। তাঁরা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আবেদন নিয়ে আসেন। সেই আবেদনে সই করেন অধ্যক্ষ। এর পর কলেজ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের আরেকটি দলকে নিয়ে পদত্যাগের দাবিতে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা অধ্যক্ষকে এক ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে আলটিমেটাম দেন। অধ্যক্ষ পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে অধ্যক্ষ, তাঁর স্বামী ও ছেলেকে মারধর করা হয়। এ সময় অধ্যক্ষের ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে অধ্যক্ষ বাধ্য হয়ে তাঁদের দেওয়া পদত্যাগ ও বদলির আবেদনে স্বাক্ষর করেন।

রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষের ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে অধ্যক্ষ বাধ্য হয়ে পদত্যাগ ও বদলির আবেদনে স্বাক্ষর করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

অধ্যক্ষ আমিনা আবেদীন কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বলেন, তিনি কোনো ক্ষমতাসীনদের পা চেটে অধ্যক্ষ হননি। নিজের যোগ্যতায় এ পদে এসেছেন। সকালে শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করেন। এরপর আরও শিক্ষার্থী এসে তাঁকে অবরুদ্ধ করে পদত্যাগ করতে বলেন। তাঁরা ছাত্রদলের লিমন (এমদাদুল হক) নামে একজনের নেতৃত্বে আসেন। তিনি অসুস্থ বোধ করায় চলে যেতে চান। এ সময় অটোরিকশার মধ্যে তাঁর ছেলেকে মারধর করা হয়। তাঁকেও (আমিনা আবেদীন) আঘাত করা হয়। এ খবর পেয়ে তাঁর স্বামী কলেজে এলে তাঁকেও মারধর করা হয়। পরে ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিলে তিনি তাঁদের দেওয়া পদত্যাগের আবেদনে স্বাক্ষর করে কোনোরকমে বাসায় ফেরেন। এখনো তিনি আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

আমিনা আবেদীন আরও বলেন, বিএনপির নেতা নজরুল হুদা এসে তাঁকে গালিগালাজ করে পদত্যাগে বাধ্য করান। তিনি তখন বলেন, ‘আগের সরকার যা করেছে, আপনারা সে পথেই যাচ্ছেন।’ তখন ওই নেতা গালি দিয়ে জুতাপেটা করার হুমকি দিতে থাকেন। সবাইকে জুতাপেটা করার নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা বলেন, তিনি কলেজের পাশেই থাকেন। সেখানে যাতে করে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সে কারণে গিয়ে ওই অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের করে এনেছেন। তিনি কোনো গালিগালাজ করেননি। শিক্ষার্থীরা আগে কাউকে মেরেছেন কি না তিনি তা জানেন না। তিনি বেলা একটার পর সেখানে যান।

ছাত্রদলের কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হক (লিমন) দাবি করেন, এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল। এখানে ছাত্রদলের কোনো ভূমিকা নেই। কাউকে মারধর করেননি তাঁরা।