সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম | ছবি সংগৃহীত |
প্রতিনিধি নাটোর: নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম (শিমুল) ও তাঁর স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আজ বৃহস্পতিবার দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় নির্দেশনা পাঠিয়ে তাঁদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে বলেছে। একই সঙ্গে শফিকুল ইসলামের পরিবারের অন্য সদস্যদের (পুত্র, কন্যা ও মা–বাবা) ব্যক্তিগত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে।
বিএফআইইউর নির্দেশনা অনুযায়ী, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক হিসাবের মাধ্যমে সব লেনদেন বন্ধ থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করা যাবে না।
নির্দেশনায় বিএফআইইউ বলেছে, নাটোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যক্তিগত ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে অতীতে বা বর্তমানে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব পরিচালিত হলে সেসব হিসাবসংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল, যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠাতে হবে।
শফিকুল ইসলাম বিভিন্ন কারণে সমালোচিত। তিনি ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাটোর সদর আসনের সংসদ সদস্য হন। ওই বছরই তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৮ ও ২০২৪ সালেও তিনি সংসদ সদস্য হন। সংসদ সদস্য হওয়ার পরই তাঁর পরিবারের সবার ভাগ্য ঘুরে যায়। স্ত্রীর নামে নাটোরে জান্নাতি প্যালেস নামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেন শফিকুল। পাশাপাশি কানাডার টরন্টোর নিকটবর্তী স্কারবরো শহরে আরেকটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে তাঁর।
তিন বছর আগে নাটোরের সরকারদলীয় চার সংসদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামী লীগের চারজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে শফিকুলের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও দলকে পারিবারিকীকরণের বিষয়ে অভিযোগ করেন। তাতে দেশে-বিদেশে বিলাসবহুল বাড়ি ছাড়া ঢাকার আদাবর রিং রোডে তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি ও ভগ্নিপতির নামে পাঁচটি ফ্ল্যাট কেনার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নাটোরের হাতিমারা বিলে ১৫ থেকে ১৬ বিঘা জমি এবং যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে নামে-বেনামে সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ওই দিন বিকেলে শফিকুল ইসলামের জান্নাতি প্যালেসে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া শফিকুল ইসলামের পুরোনো বাড়ি এবং তাঁর ছোট ভাইয়ের একটি পাঁচতলা বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনটি বাড়িই লুটপাট হয়।