প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস হাওলাদার ও একই ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সাগর হাওলাদার | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি গৌরনদী: বরিশালের উজিরপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে অপর দুই  আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  শনিবার রাতে উপজেলার সাতলা পশ্চিমপাড় সেতু এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়।

হামলায় নিহত দুজন হলেন সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ইদ্রিস হাওলাদার (৪৬) ও একই ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সাগর হাওলাদার (২৮)। এর মধ্যে ইদ্রিস হাওলাদার গতকাল রাতে এবং সাগর হাওলাদার আজ রোববার সকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় লোকজন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিন হাওলাদারের সঙ্গে সাতলা বাজারের ব্যবসায়ী ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ইদ্রিস হাওলাদারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এ বিরোধের জের ধরে গত ১৭ মার্চ শাহিন হাওলাদারের নেতৃত্বে ৫০–৬০ জন ইদ্রিস হাওলাদারের বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। এ ঘটনায় ইদ্রিস হাওলাদার একাধিক মামলা করেন। এসব মামলায় শাহিন হাওলাদার ও তাঁর চাচাতো ভাই উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে তাঁদের প্রতিহিংসা আরও বেড়ে যায়।

ইদ্রিস হাওলাদারের চাচাতো ভাই মো. রবিউল ইসলাম বলেন,  শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইদ্রিস হাওলাদার তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে চাচাতো ভাই সাগর হাওলাদারের মোটরসাইকেলে সাতলা বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। রাত পৌনে ১১টার দিকে সাতলা পশ্চিমপাড় ব্রিজের ঢালে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহিন হাওলাদারের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা আসাদ হাওলাদার, সন্ত্রাসী ইলিয়াস হাওলাদার, সোহেল হাওলাদারসহ ২০–২৫ জন তাঁদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন। এরপর তাঁরা ইদ্রিস ও সাগর হাওলাদারকে বেদম পিটুনি দেন ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান। এতে ঘটনাস্থলেই ইদ্রিস হাওলাদার মারা যান ও সাগর হাওলাদার গুরুতর আহত হন।

রবিউল ইসলাম আরও বলেন, শনিবার রাতেই খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন আহত সাগর হাওলাদারকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে বরিশাল শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল ১০টার দিকে সাগর মারা যান।

আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস ও সাগর হাওলাদারকে হত্যার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ রোববার রাতে অভিযুক্ত শাহিন হাওলাদার ও আসাদ হাওলাদারের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজন জানান, ঘটনার পর থেকে শাহিন ও তাঁর সহযোগীরা মুঠোফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন।

উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাফর আহম্মেদ বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র বিরোধের জের ধরে ইদ্রিস হাওলাদার ও সাগর হাওলাদার প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছেন। তাঁদের লাশ বরিশাল শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।