ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়ন সমিতি বাজারে পানিবন্দী মানুষ। সকাল সাড়ে নয়টায় তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ফেনী: ফেনী জেলার ছয় উপজেলা এখনো প্লাবিত। পানি সরে যায়নি। পানিবন্দী হয়ে লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সুপেয় পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
আজ শুক্রবার ফেনীর স্থানীয় বাসিন্দা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এবং ফেনী সদরের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার ১০ নম্বর ঘোপাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিজকুঞ্জরা গ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বন্যার পানিতে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী একটি বাস আটকা পড়েছে। বাসটিতে ৫০ জনের মতো যাত্রী আছেন। গত বুধবার বাসটি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে এসেছিল।
উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও গত কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিতে ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম—এ তিন উপজেলা পুরোটাই বন্যাকবলিত। জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সোনাগাজী উপজেলার সব ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ দুর্ভোগে আছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রামে প্রায় এক লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। বন্যাকবলিত প্রায় সব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বেশির ভাগ মোবাইল টাওয়ার অকেজো হয়ে পড়ায় যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে।
আজ সকাল ৯ টা থেকে ফেনী সদরের তিনটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, অথই পানিতে ডুবে আছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, চাষের জমি; বিস্তীর্ণ প্রান্তর। অনেক গ্রামে বাড়ির পর বাড়ি খালি পড়ে আছে। আবার কিছু এলাকায় আটকে আছেন বাসিন্দারা।
এই এলাকায় সকাল ১০টা থেকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। সংস্থার চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, দুটি টিম ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ফেনীতে অন্তত এক লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও বুক সমান পানি হয়েছে। এ কারণে বাস চলাচল করতে পারছে না | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আজ সকাল আটটায় চট্টগ্রাম নগরের এ কে খান ও অলংকার থেকে ঢাকা, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করা দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। মহাসড়কে ট্রাক, কনটেইনারবাহী ট্রেইলর, ব্যক্তিগত কার, মিনি ট্রাক দেখা গেছে। তবে চট্টগ্রাম নগর থেকে মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পর্যন্ত ছোট আকারের কিছু বাস যাচ্ছে। এই প্রতিবেদক সকাল ৭টায় ফেনীর উদ্দেশে রওনা দেন। কিছু দূর হেঁটে, কিছু দূর সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কিছু দূর বাসে করে ফেনীতে পৌঁছান।
সকালে এ কে খান এলাকায় কথা হয় মো. আলমগীর নামের এক চাকরিজীবীর সঙ্গে। তাঁর বাড়ি কুমিল্লা। বন্যার পানিতে বসতবাড়ি ডুবে গেছে। পরিবারের সদস্যদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসার জন্য কুমিল্লা যেতে চান। তবে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরও কোনো বাস পাননি। বাধ্য হয়ে বারইয়ারহাটের একটি বাসে উঠেছেন। মো. আলমগীর বলেন, ভেঙে ভেঙে যেতে হবে তাঁকে। বসতবাড়ি ডুবে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন।
ট্রাক চালকদের সঙ্গে কথা বলে ও ফেনী সদরে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশ, কুমিল্লা অংশে মহাসড়কের ওপর বন্যা পানি জমে আছে। কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও বুক সমান পানি হয়েছে। এ কারণে বাস চলাচল করতে পারছে না।
মোহাম্মদ সাইফুল নামের এক ট্রাক চালক যাবেন ঢাকায়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মিরসরাই এসে আটকে আছেন। কোনো নড়চড় নেই।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়ন সমিতি বাজারে উদ্ধার করে আনা হয়েছে মানুষকে। সকাল সাড়ে নয়টায় তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সরেজমিন দেখা যায়, মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে ঢাকাগামী অন্তত ৩০ কিলোমিটার সড়কে হাজার হাজার যানবাহন আটকে আছে। কেউ ১০ ঘণ্টা, কেউ ২৪ ঘণ্টা ধরে আটকে আছেন। নারী শিশুরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে শিশুদের নিয়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন।
ইয়াসমিন আক্তার ও জয়নাল মিয়া দম্পতি তাঁদের মেয়েকে নিয়ে ঢাকা যাবেন। গতকাল বিকেলে বাসে উঠেছিলেন। পরে ফেনী সদরে ঢোকার মুখে আটকে গেছেন। গত রাতে অপেক্ষার পর আজ সকাল ১০ টায় হাঁটা শুরু করেন। পরে কয়েকজন মিলে মিনি ট্রাক ভাড়া করেছেন। জয়নাল বলেন, উল্টো পথে যতটুকু যেতে পারেন যাবেন।