এক মাসের অচলাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আজ রোববার থেকে | ফাইল ছবি |
বিশেষ প্রতিবেদক: এক মাসের অচলাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আজ রোববার থেকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ থেকে খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও পুরোদমে চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো নতুন সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন বা প্রচলিত অর্থে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা চার দিন মূল্যায়ন কার্যক্রম হওয়ার পর তা আটকে যায়। কবে ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন শুরু হবে তা নিশ্চিত নয়।
খুলছে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা
আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর ৭ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও স্কুলগুলোতে ভয় ও আতঙ্কে উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা।
এরপরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রোববার থেকে খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে নতুন করে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার জারি করা এই নির্দেশনায় বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে গত বুধবার এক আদেশে পুরোদমে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে শ্রেণি কার্যক্রম চালুর নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দুই মাস বিরতি দিয়ে এইচএসসি
এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো নতুন সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে।
এ বিষয়ে গতকাল সংশোধিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষার্থী আন্দোলনের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় এসব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৮ দিন পরীক্ষা হয়েছে। এখনো আরও ১৩ দিনের পরীক্ষা বাকি আছে।
ষাণ্মাসিক পরীক্ষা আটকে আছে
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, গত ৩ জুলাই থেকে সারা দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন বা প্রচলিত অর্থে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে এক কোটির মতো শিক্ষার্থী এই মূল্যায়ন কার্যক্রমে অংশ নেয়। মোট ১০ বিষয়ে ১০ দিনে মূল্যায়ন কার্যক্রম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চার দিন মূল্যায়ন কার্যক্রম হওয়ার পর তা আটকে যায়।
ঢাকার একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এই মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এখন বিগত সরকার আমলের এই শিক্ষাক্রম দিয়ে মূল্যায়ন পরীক্ষা হবে কি না, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।
শিক্ষাক্রমের কী হবে
গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও চালু হয়েছে এ শিক্ষাক্রম। ২০২৭ সালে এটা দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে। এ বছর যারা নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তারাই নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রথমবারের মতো এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে হতে পারে এ পরীক্ষা। নতুন শিক্ষাক্রমে শিখন ও মূল্যায়নে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু এই শিক্ষাক্রম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক আছে। সরকার পরিবর্তনের পর এখন এই শিক্ষাক্রমের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। দলীয় পরিচালনা কমিটিগুলো রেখে কতখানি স্বাভাবিক রাখা যাবে, সেটি ভেবে দেখতে হবে। আবার সংস্কারের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসির মতো পরীক্ষার বোঝা যেন আবার না আসে। শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী হতে পারে, কিন্তু পরীক্ষার বোঝা যেন না ঢোকে।
রাশেদা কে চৌধূরী মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগ হয়তো একটি প্রক্রিয়ার বিষয়।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সচল রাখার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের কারণে গত ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে।