ফেনীর সোনাগাজীতে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবিটি বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছাড়াইতকান্দি এলাকা থেকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি সোনাগাজী: ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলার পর এবার ফেনী পৌর শহরও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে সদর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুহুরী নদীর পানি বেড়ে সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ও নবাবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।

তিন দিন ধরেই প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকার পাশাপাশি ফেনীর বিভিন্ন নদী ও খালের পানি বেড়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকালে মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে ফেনীর মুহুরী নদীর পানি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার বন্যায় উপদ্রুত অঞ্চলে দুর্গতদের সহায়তা ও উদ্ধার তৎপরতায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা।

পানির তোড়ে ভেঙে গেছে জেলার বহু এলাকার রাস্তা, বাঁধ ও সেতুর অংশ। ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই লাখের বেশি মানুষ। অনেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।

ফেনী শহরের বাসিন্দা মো. ইব্রাহীম বলেন, জেলার তিন উপজেলার পর ফেনী শহরও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাঁদের বাসার নিচতলায় পানি ঢুকে যাওয়ায় বাসা ছেড়ে সদর উপজেলার ফকিরাহাট এলাকায় বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামের বাড়িতেও সকাল থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
শহরের পূর্ব উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, গতকাল বুধবার রাত থেকে উজানের পানির চাপ বাড়তে থাকায় ফেনী পৌর শহরও পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাঁদের বাসার নিচতলা পুরোপুরি পানিতে ডুবে গেছে। পরে বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

সোনাগাজী উপজেলার চর লামছি এলাকার বাসিন্দা সালাহ উদ্দিন বলেন, রাতে মুহুরী নদীর পানি আরও বেড়েছে। এখন বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে বাড়িঘর। এতে করে নবাবপুর ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জহিরুল আলম বলেন, মুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তাঁর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকায় ঢুকেছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

উপজেলার চর খোন্দকার জেলেপাড়ার প্রিয় লাল জল দাস বলেন, গতকাল দুপুর থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামি আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করতে অন্তর ৫০টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করেছেন তাঁরা।

সোনাগাজী উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির কর্মসূচি (সিপিপির) সহকারী পরিচালক মুনির চৌধুরী বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকেরা প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। খালগুলো দিয়ে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি খালে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা উজানের পানি সহজে নেমে যেতে মুহুরী প্রকল্প এলাকায় ফেনী রেগুলেটরের ৪০টি এবং মুছাপুর রেগুলেটরের ১৮টি গেট (জলকপাট) খুলে দেওয়া হয়েছে।