পেনশন | প্রতীকী ছবি

বিশেষ প্রতিনিধি: সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে সরকার আজ পুরো স্কিমই বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার দুপুরে গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী এমন ঘোষণা দেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আজ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘এ মর্মে জানানো যাচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রত্যয় স্কিমসহ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ১৩ মার্চ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত ও বিধিবদ্ধ সংস্থায় নতুন যোগ দেওয়া চাকরিজীবীদের জন্য প্রত্যয় স্কিম চালু করে। বলা হয়, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে যারা এসব সংস্থায় নতুন যোগ দেবেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রত্যয় প্রযোজ্য হবে। এর পর এই স্কিম থেকে নিজেদের বাদ দিতে থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। গত ১ জুলাই থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জনসহ সব ধরনের কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।

অর্থ বিভাগের বিজ্ঞপ্তির আগে আরেকটা বিজ্ঞপ্তি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’

সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাইরে রাখাসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকনেতারা। শিক্ষকদের দিক থেকে এতে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম। প্রত্যয়ে না থাকাসহ শিক্ষকদের আরও দুটি দাবি আছে। সেগুলো হচ্ছে স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো ও সুপার গ্রেড।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন শিক্ষকেরা। ওই বৈঠকের পর জানানো হয়েছিল, সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচির বাস্তবায়ন এক বছর পেছানো হবে। কিন্তু শিক্ষকেরা এতে একমত হননি।

মোট ৪০৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ ইত্যাদি সংস্থায় গত ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের ওপর প্রত্যয় প্রযোজ্য করা হয়। এর মধ্যে ৯০টি সংস্থার কর্মী পেনশন পেয়ে এলেও বাকি ৩১৩টি সংস্থার কর্মীরা পেনশনের বাইরে আছেন।

জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আপাতত প্রত্যয় স্কিম বাতিল করা হয়েছে।’ এর বাইরে কিছু বলতে চাননি তিনি।

প্রত্যয় বাতিলে সরকারের সিদ্ধান্তকে কি স্বাগত জানাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জানাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের দাবি ছিল তিনটি; একটি পূরণ হলো; সুপার গ্রেডের দাবিও শিগগির পূরণ হবে। তবে স্বতন্ত্র বেতনকাঠামোর দাবি পূরণ হতে একটু সময় লাগবে। তবে আমরা আশা করি, এটিও পূরণ হবে।’