বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ তহবিলে পানি, শুকনা খাবারসহ নানা
খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা দিচ্ছেন মানুষজন। আজ ২৩ আগস্ট ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সিলেট বিভাগের চার জেলা, ফেনী, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার্ত মানুষকে সহযোগিতা করতে আজ শুক্রবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গণত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আজ সকাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে রাত আটটা পর্যন্ত। দিনভর ত্রাণ সংগ্রহের পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে টিএসসি থেকে ত্রাণবোঝাই কয়েকটি ট্রাক নিয়ে দুর্গত এলাকায় গেছেন ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।
বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ সংগ্রহে টিএসসির ফটকে বুথ বসিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ ও নগদ অর্থ তুলে দিচ্ছেন আন্দোলনের প্রতিনিধিদের হাতে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনেক শিক্ষার্থী কাজ করছেন। গতকাল ত্রাণের পাশাপাশি ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা জমা পড়ে এই ত্রাণ তহবিলে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গণত্রাণ সংগ্রহের এই কর্মসূচিতে গতকালের মতো আজও শামিল হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, টিএসসির ফটকে বুথ সামলাচ্ছেন ছাত্রীরা। কেউ বোতলজাত পানি ও খাওয়ার স্যালাইন, কেউ মুড়ি-চিড়া, কেউবা বিস্কুট, আবার কেউ খেজুরসহ বিভিন্ন শুকনা খাবার নিয়ে আসছেন। স্বেচ্ছাসেবক ছাত্র-ছাত্রী সেগুলো হাতে কিংবা কাঁধে করে টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়াকক্ষ ও ক্যাফেটেরিয়ায় জমা রাখছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই উদ্যোগে কেউ কেউ নগদ অর্থও দিচ্ছেন। বুথে বসা ছাত্রীরা খাতায় অনুদানের অঙ্ক লিখে টাকা জমা রাখছেন।
বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধারকাজে অংশ নিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা ২০০টি স্পিডবোটে করে দুর্গত এলাকায় গেছেন বলে জানালেন আন্দোলনের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন উইংয়ের সদস্য আবদুল্লাহ সালেহীন। তিনি আজ দুপুরে বলেন, গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। গতকাল রাতে টিএসসি থেকে কয়েকটি ট্রাকে করে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক বলেন, ত্রাণ সংগ্রহের পর গতকাল রাতে টিএসসির অভ্যন্তরীণ ক্রীড়াকক্ষে প্যাকেজিংয়ে অংশ নেন অনেক শিক্ষার্থী। ছাত্রদের পাশাপাশি অংশ নেন ছাত্রীরাও। যেসব ট্রাক গতকাল রাতে দুর্গত এলাকার উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিতে ৭০০ থেকে ৮০০ বস্তা করে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। দুর্গত মানুষের জন্য ট্রাকে করে পানি, শুকনা খাবার, ওষুধ, লাইফ জ্যাকেট ও জরুরি পণ্য পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ সংগ্রহের স্বচ্ছ হিসাব রাখার ব্যাপারেও আন্দোলনের সমন্বয়কেরা সচেষ্ট।
দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা শুরুর পর গত বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণত্রাণ সংগ্রহের এই উদ্যোগের ঘোষণা দেন। আন্দোলনের সব সমন্বয়ক ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিজ নিজ জেলা-উপজেলায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও জনসাধারণের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠনের আহ্বান জানান বাকের।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল সবার সঙ্গে সমন্বয় করে বন্যাকবলিত এলাকার লোকজনের উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নিজস্ব উদ্যোগে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। দুপুরে ডিজাস্টার সায়েন্স ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের একদল শিক্ষার্থীকে রাজু ভাস্কর্যের সামনের সড়কে ত্রাণ সংগ্রহ করতে দেখা যায়। কেউ কেউ ছোট ছোট বাক্স নিয়ে ঘুরে ঘুরে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন।