বেলা দুইটা থেকে শহরের সাতমাথা অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষোভকারীা। সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় শহরের ব্যস্ততম সাতমাথা এলাকার চিত্র এমন। বগুড়া শহর, ০৩ আগস্ট | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বগুড়া ও শেরপুর: বগুড়ায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে বেশ কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন। শনিবার বিকেল চারটার দিকে শহরের সাতমাথা থেকে মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণকালে এ ঘটনা ঘটে।
আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শহরের সাতমাথা, সার্কিট হাউস মোড়, জেলা জজ আদালতের সামনের সড়ক, কালীবাড়ী মোড়সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সরকার পতনের একদফা দাবিতে বেলা আড়াইটা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজারো শিক্ষার্থী-জনতা সাতমাথা এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের মিছিল–স্লোগানে সাতমাথা এলাকা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
হাজারো শিক্ষার্থী-জনতার উপস্থিতিতে পুরো সাতমাথা এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শনিবার বগুড়া শহরের সাতমাথায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বেলা তিনটার দিকে সাতমাথা থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় জিলা স্কুলের ফটকের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ মিছিলটি জিলা স্কুল অতিক্রম করার সময় পুলিশকে দেখে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, বোতল ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীরা পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়েন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জিলা স্কুলের ভেতরে অবস্থান নেন।
মিছিলের একাংশ সার্কিট হাউস মোড় অতিক্রম করার সময় পুলিশ প্লাজার সামনে পুলিশের সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে সার্কিট হাউসের অভ্যর্থনাকক্ষের কাচ ভাঙচুর করেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন। পরে জলেশ্বরীতলা, সাতমাথা, সার্কিট হাউস মোড়, জেলা জজ আদালতের সামনের সড়ক, কালীবাড়ী মোড়সহ গোটা শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে সংঘর্ষ সাতমাথা, সার্কিট হাউস মোড়সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, বিক্ষোভকারীরা জিলা স্কুলের সামনে ও পুলিশ প্লাজার সামনে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে ইটপাটকেল ছুড়লে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
দুপচাঁচিয়া ও শেরপুরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি
এদিকে জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হাজারো শিক্ষার্থী। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন তাঁরা। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে রোববার থেকে ঘোষিত সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি সফল করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
দুপচাঁচিয়ায় ছাত্র–জনতার বিক্ষোভ মিছিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপজেলা সদরের জাহানারা কামরুজ্জামান ডিগ্রি কলেজ মাঠে জড়ো হন। সেখান থেকে হাজারো শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়ক হয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজারে অবস্থান নেন। পরে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়ক, বন্দর তিনমাথা ও দুপচাঁচিয়া থানা রোড হয়ে আবার জাহানারা কামরুজ্জামান ডিগ্রি কলেজে গিয়ে শেষ হয়।
দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন সরকার বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকলেও কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় শেরপুরের করতোয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি উপজেলা শেরুয়া বটতলা পর্যন্ত ঘুরে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বেলা সোয়া একটায় শেষ হয় উপজেলা পরিষদের সামনে।
শেরপুরে শিক্ষার্থীদের মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কর্মসূচিতে
অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা শেরপুরের মহাসড়কের করতোয়া বাসস্ট্যান্ড, সিটি
ব্যাংকের সামনে ও ধুনট রোড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের ওপর বসে অবস্থান
নেন। এতে এ সময় মহাসড়কের ওপর দূরপাল্লাগামী যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা
সৃষ্টি হয়।