দোষীদের ফাঁসির দাবিতে কলকাতার রাজপথে নামলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা

আর জি কর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসক নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার চেয়ে মিছিলে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি কলকাতা: কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে এখনো কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের আন্দোলন চলছে। আজ শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি আজ বিকেলে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত অপরাধীদের অবিলম্বে ফাঁসির দাবিতে কলকাতার মৌলালি থেকে ধর্মতলার ডরিনা ক্রসিং পর্যন্ত এক প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন। এতে যোগ দেন তৃণমূলের নারী সংসদ সদস্য, বিধায়কসহ নেতারা। তাঁরা দাবি তোলেন অবিলম্বে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে ফাঁসি দিতে হবে।

আর জি কর হাসপাতালে পুলিশের ওপর হামলার নিন্দা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘সারা রাত ঘুমাইনি। জেগে ছিলাম, কখন শান্তি ফিরে আসবে।’ মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় থাকা গান্ধীজির পথে থেকে অহিংস আন্দোলনেরও ডাক দিয়েছেন।

মমতা তদন্ত প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি চাই না কুৎসা করতে। সিবিআই তদন্ত করছে। বিচারাধীন। আইন হাতে নেবেন না।’ শেষে মমতা স্লোগান দিয়ে বলেন, ‘দোষীদের ফাঁসি চাই। রাম-বামের চক্রান্ত ব্যর্থ করুন। কুৎসাকারীদের ব্যর্থ করুন। বাংলা মাকে অসম্মানের জবাব দাও বিজেপি।’

আগামীকাল শনিবার ভারতজুড়ে চিকিৎসকদের সর্ব্বোচ সংস্থা আইএমএ বা ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন দেশের সব চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও  প্রাক্তনীরা আজ মোমবাতি হাতে নিয়ে মিছিল করেছেন। বাম ছাত্র ও যুব সংগঠন এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই আজ রাজ্যজুড়ে পালন করেছে ধিক্কার দিবস।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল আজ কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইতিমধ্যে হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরও শনাক্ত করে উপযুক্ত শান্তি দেওয়া হবে।

কলকাতায় নারী চিকিৎসকে ধর্ষণ করে হত্যার প্রতিবাদে অর্ধদিবস বনধের ডাক দেয় এসইউসিআই | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ভারতের সমাজতান্ত্রিক ঐক্য কেন্দ্র (এসইউসিআই) আজ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যার প্রতিবাদে অর্ধদিবস বন্‌ধ্‌ পালনের ডাক দেয়। এই বনধে মিশ্র সাড়া মেলে। জলপাইগুড়িতে পালন হয় বন্‌ধ্‌। তমলুক, জয়নগর, রায়দীঘি, কুলপি, বীরভূম, বেহালায় বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান এসইউসিআইয়ের নেতা–কর্মীরা। এ ছাড়া মেদিনীপুর, বেলদা, হাজরা মোড়, বেহালা, শিলিগুড়ি, বাঁকুরা, মালদা, শ্যামবাজার, কাটোয়ায় বন্‌ধ্‌কে কেন্দ্র করে এসইউসিআই ও পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশও এসইউসিআইর বহু নেতা–কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায় লালবাজার পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। একইভাবে বিজেপির অবস্থান ধর্মঘটে যোগ দেওয়া নেতা–কর্মীদের জোর করে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় লালবাজার পুলিশ হেড কোয়ার্টারে।

এদিকে আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ করে নারী চিকিৎসকের মৃত্যুর তদন্ত করছে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। সিবিআই ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সঞ্জীব ঘোষকে আজ সিবিআই রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় সিবিআইর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।

আজ পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল বিজেপি মমতার পদত্যাগের দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সড়ক বন্ধ করে অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ অধিকাংশ স্থানে তাদের অবস্থান ধর্মঘটে বসতে না দিয়ে তুলে নিয়ে যায়।  একইভাবে বিজেপি বিকেলে মোমমাতি নিয়ে কালীঘাটের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দিকে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পুলিশ এক্সাইড মোড়ে রাস্তায় ব্যারিকেড করে আন্দোলনকারীদের প্রিজন ভ্যানে করে তুলে নিয়ে যায়। শ্যামবাজারের অবস্থান মঞ্চ ভেঙে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে অবশ্য বিজেপির নেতা–কর্মীরা মাটিতে বসে অবস্থান ধর্মঘটে যোগ দিয়ে চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডে মমতাকে দায়ী করে অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি তোলেন।

এদিকে রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি তুলেছেন, এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসব ঘটনা ঘটছে। তিনিই রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরও দেখেন। রয়েছেন পুলিশ মন্ত্রীর পদেও। আজও কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতাল সহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র ও রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে।

গত শুক্রবার ভোরে আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় ডিউটি শেষ করে সেমিনার রুমে বিশ্রাম নেওয়া এক নারী চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়া নিয়ে। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে আর জি কর হাসপাতালসহ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। সাত দিন ধরে চলছে ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও চিকিৎসকদের কর্মবিরতি।