পাবনায় সিফাত আলী ও আরজিনা খাতুন দম্পতির বুক ও পেট জোড়া লাগানো যমজ সন্তান। জেলার ফরিদপুর উপজেলার লাইফ কেয়ার ক্লিনিকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ফরিদপুর: পাবনার ফরিদপুর উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বুক ও পেট জোড়া লাগানো যমজ কন্যাশিশুর জন্ম হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে অস্ত্রোপচারের (সিজারিয়ান অপারেশন) মাধ্যমে এই যমজ শিশুর জন্ম হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্লিনিক থেকে তাদের বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। দুজনই সুস্থ আছে। তবে জোড়া লাগানো যমজ দুই শিশুকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবার।
এই যমজ নবজাতকেরা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার হাদল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের সিফাত আলী (৪২) ও আরজিনা খাতুন (৩৬) দম্পতির সন্তান। সিফাত আলী দিনমজুর। আরজিনা খাতুন গৃহিণী। তাঁদের আরও একটি ছেলে ও দুটি মেয়েসন্তান রয়েছে।
এই দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে আরজিনা খাতুনের প্রসববেদনা শুরু হয়। তাঁকে ফরিদপুর উপজেলা সদরের গোপালনগর এলাকার লাইফ কেয়ার নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাতেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বুক ও পেট জোড়া লাগানো যমজ এই কন্যাশিশুর জন্ম হয়।
আরজিনা খাতুন জানান, তিনি গর্ভধারণ করার পর তিনবার আলট্রাসনোগ্রাম করেছেন। চিকিৎসকেরা কখনোই তাঁকে যমজ শিশুর কথা বলেননি। তবে পেটে শিশু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবে শিশুর জন্ম সম্ভব নয়, অস্ত্রোপচার করতে হবে বলেছিলেন। তাই তিনি দ্রুত ক্লিনিকে ভর্তি হন। পরে অস্ত্রোপচারে জোড়া লাগানো যমজ শিশুর জন্ম হয়।
আরজিনা বলেন, তিনি তাঁর সন্তানদের আদর-যত্নে বড় করতে চান। কিন্তু তাঁদের শরীরের কী অবস্থা, সেটি বুঝতে পারছেন না। ভালো চিকিৎসক দেখানোর সাধ্যও তাঁদের নেই। তাই নবজাতক সন্তানদের নিয়ে তিনি খুব চিন্তায় আছেন।
শিশু দুটির বাবা সিফাত আলী বলেন, তিনি দরিদ্র দিনমজুর। স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের খরচই তিনি জোগাড় করতে পারেননি। এখন যমজ দুই শিশুকে নিয়ে চিন্তায় আছেন। তাদের কোথায় নেবেন, কোন চিকিৎসককে দেখাবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।
ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারটি করেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডলি রানী সাহা। তিনি বলেন, সুন্দরভাবেই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। মা ও শিশু দুটি সুস্থ আছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, শিশু দুটি একটি ফুসফুস দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করছে। বুক ও পেট জোড়া লাগানো হলেও তাদের পায়ুপথ ও মাথা আলাদা। শিশু দুটির উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
ক্লিনিকের জ্যেষ্ঠ নার্স রত্না খাতুন বলেন, ‘এমন বুক ও পেট জোড়া লাগানো যমজ শিশু আগে দেখিনি। তবে জন্মের পর থেকেই শিশু দুটি সুস্থ আছে। তারা ঠিকমতো খাবারও গ্রহণ করছে।’
লাইফ কেয়ার ক্লিনিকের মালিক মাহাদী হাসান বলেন, ‘শিশু দুটির বাবা খুবই দরিদ্র। শিশু দুটি জন্মের পর আমরা যতটুকু পারি, তাঁকে সহযোগিতা করেছি। তিনি সুস্থভাবেই শিশুদের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। তবে শিশু দুটিকে সুস্থ রাখতে হলে ভালো কোনো শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরি বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। যেটা ওই শিশুদের বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে শিশু দুটি প্রাণে রক্ষা পেত।’