যুবলীগ নেতা বাবুল হোসেন | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি বাগমারা: সরকার পতনের পর গত ৬ আগস্ট নিজের পোড়া বাড়ি–গাড়ি, ধ্বংসস্তূপের ১৪টি ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট দেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার যুবলীগ নেতা বাবুল হোসেন। ওই সময় থেকে প্রাণভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। এর ছয় দিন পর তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়।

বাগমারা উপজেলার বীরকয়া গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেন রাজশাহী জেলা যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। আজ সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

পরিবারের সদস্যদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। স্থানীয় একটি পক্ষ তখন বাবুল হোসেনের বাড়িতে হামলা করে। দুর্বৃত্তরা বাড়ি ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট করে। পরে বাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে বাড়িতে থাকা বাবুল হোসেনের একটি প্রাইভেট কার, চারটি মোটরসাইকেলসহ সবকিছু পুড়ে যায়।

পরদিন বাবুল হোসেন এসব ঘটনার বিবরণ ও পুড়ে যাওয়া বাড়ির ছবি দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি লেখেন, বীরকয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে তাঁর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

বাবুল হোসেনের স্বজনেরা বলেন, এ ঘটনার পর প্রাণভয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আত্মগোপনে চলে যান বাবুল। সেখানে থাকা অবস্থায় ১২ আগস্ট হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। পরে তাঁকে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়।

বাবুলের ছোট ভাই ছোটন হোসেনের দাবি, গ্রামের রাজনীতির কারণে তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তাঁর ভাইয়ের প্রতিপক্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে এসব করা হয়েছে।

হামলাকারীদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তাঁদের সঙ্গে কয়েকজন বিএনপির সমর্থকও ছিলেন। বাবুলের বাড়িতে হামলা ও মৃত্যুর জন্য তাঁদের দায়ী করেন ছোটন।

অভিযোগের বিষয়ে বাগমারা উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দলের কেউ এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। প্রমাণ পাওয়া গেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে নুরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে জানিয়েছেন বাসুপাড়া ইউনিয়ন দলটির সভাপতি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, নুরুল ইসলাম দল করেন না। ওই গ্রামে দুটি পক্ষ আছে। তাদের মধ্যে প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নুরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।