চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা থেকে শুরু হওয়া গণমিছিল নিউ মার্কেট মোড়ে কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। আজ বেলা আড়াইটায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ১০ কিলোমিটার সড়ক প্রদক্ষিণ করেছে হাজারো শিক্ষার্থীর গণমিছিল। আজ শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে নগরের আন্দরকিল্লা থেকে শুরু হওয়া মিছিল শেষ হয় বেলা পাঁচটার দিকে নগরের বহদ্দারহাট গিয়ে। পথিমধ্যে নিউমার্কেট মোড় ও টাইগারপাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভকারীদের মিছিল নগরের ওয়াসা মোড় অতিক্রম করার সময় পুলিশের সাঁজোয়া যান দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে যান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া দিলে তাঁরা সরে যান। একপর্যায়ে ওয়াসায় নির্মাণাধীন ট্রাফিক পুলিশের বক্স ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি বাগমনিরাম এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি মিছিল দেখে ধাওয়া দেওয়া হয়। এরপর নগর পুলিশের কার্যালয়-সংলগ্ন পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নামফলক ভেঙে ফেলা হয়। তবে কেউ ভেতরে ঢোকেননি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করেছি। ভাঙচুরের ঘটনায় আন্দোলনকারীদের কেউ জড়িত নন। দুষ্কৃতিকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রথম থেকেই যারা আমাদের আন্দোলনে বাধা দিয়েছে, প্রতিহত করতে চেয়েছে, তারাই আমাদের মধ্যে ঢুকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের আন্দরকিল্লা এলাকায় জুমার নামাজের আগে থেকে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। নামাজ শেষে হওয়ার পর আন্দরকিল্লা চত্বরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় নেমে আসে ভারী বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এক দল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দরকিল্লা থেকে দেওয়ান বাজারের দিকে চলে যায়। আরেকটি বিশাল অংশ নগরের লালদীঘি হয়ে নিউমার্কেটে গিয়ে জড়ো হয়। সেখানে তাঁরা ১০ থেকে ১৫ মিনিট অবস্থান করে শিক্ষার্থী হত্যার বিচারসহ সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় নগরের ব্যস্ততম নিউমার্কেট মোড়।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এক নারী তাঁর সন্তানকে নিয়ে প্রতিবাদ জানান। পরে সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে নগরের টাইগারপাস মোড়ে যান। সেখানে সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
টাইগারপাস থেকে শিক্ষার্থীদের আরেকটি বিশাল অংশ মিছিল নিয়ে নগরের লালখান বাজার, ওয়াসা মোড় পার হচ্ছিলেন। ওই সময় ওয়াসা মোড়ে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান ও কিছু পুলিশ সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তখন মিছিলে থাকা শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে সাঁজোয়া যানটি কিছুটা দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়। পাশাপাশি সরে যান পুলিশ সদস্যরা। এরই ফাঁকে ওয়াসা মোড়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশ বাক্সে ভাঙচুর চালানো হয়। এতে বাক্সটির সামনে কাচগুলো ভেঙে যায়। পাশাপাশি ওয়াসা মোড়ের পশ্চিমে বাগমনিরাম এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি মিছিল দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে যান মিছিলে থাকা শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ধাওয়া দিলে তাঁরা সরে যান।
ওয়াসা মোড় অতিক্রম করার পর নগর পুলিশের সদর দপ্তর ও দামপাড়া পুলিশ লাইন। এগুলোর প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন। ওই সময় ফটকের ভেতর পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে কয়েকজন ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেন। নগর পুলিশের কার্যালয়-সংলগ্ন পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এটির নামফলক ভেঙে ফেলে দেওয়া হয়।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসায় ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নামফলক ভেঙে ফেলেছে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
কখনো বেশি, কখনো কম বৃষ্টি উপেক্ষা করে নগরের জিইসি মোড়, মুরাদপুর হয়ে বহদ্দারহাট গিয়ে পৌঁছান শিক্ষার্থীরা। সেখানে সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে তাঁদের নানা দাবি জানিয়ে আসছেন। বিকেল পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা বহদ্দারহাট থেকে সরে যান।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার কোতোয়ালি অঞ্চল অতনু চক্রবর্তী বলেন, পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। আন্দরকিল্লায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন।