অর্ধকোটি বানভাসি, প্রাণ গেছে ১৮ জনের

কলাগাছের ভেলায় করে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বন্যাকবলিত কয়েকজনকে। গতকাল বেলা তিনটার দিকে ফেনী সদরের খাইয়ারা বাজার এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টির কারণে বন্যায় দেশের ১২ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ।

আজ শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ভারী বর্ষণ কমেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

ডুবে যাওয়া ঘর থেকে গৃহপালিত পশু গরু নিয়ে  নিরাপদ স্থানের দিকে যাচ্ছেন এক যুবক | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

চলমান বন্যা পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য জানাতে দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। এ সময় সচিবের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা, দুর্যোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে কামরুল হাসান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বন্যাপিড়ীত মানুষদের সরেজমিন চিকিৎসা–সেবাসহ অন্য সেবা তদারক করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম এখন ফেনীতে অবস্থান করছেন বলে জানান সচিব।

সংবাদ সম্মেলনে কামরুল হাসান বলেন, চলমান বন্যায় চট্টগ্রামে ৫, কুমিল্লায় ৪, নোয়াখালীতে ৩, কক্সবাজারে ৩, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীতে একজন করে মারা গেছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় নগদ ৩ কোটি ৫২ লাখ, শিশুখাদ্য বাবদ ৩৫ লাখ, গোখাদ্য বাবদ ৩৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া ত্রাণকাজের অংশ হিসেবে ২০ হাজার ১৫০ টন চাল ও ১৫ হাজার শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।

স্মরণকালে এমন বন্যা দেখেনি ফেনী, চারদিকে কেবল পানি আর পানি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সচিব আরও বলেন, বন্যাকবলিত ১১ জেলার ৭৭ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন ও পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৮৭টি। ১১ জেলায় এখন পানিবন্দী আছে ৯ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯।

ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা দিতে ৭৭০টি মেডিকেল টিম করা হয়েছে বলে জানান সচিব। ফেনীতে স্বাস্থ্যসেবা দিতে ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি ভি–স্যাট চালু করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে পানিবাহিত রোগবালাই বাড়ে, এদিককার প্রস্তুতি জানতে চাইলে সচিব বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে প্রস্তুতি রয়েছে।

আশপাশের জেলা থেকে যথেষ্ট বোট আনা হয়েছে। গোমতী, হালদা, মুহরী নদীর পানির পরিস্থিতির আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উন্নতি হবে বলেও জানান সচিব।

আকস্মিক বন্যায় অনেক এলাকা এখনো যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। এর মধ্যেই কোমরপানি ভেঙে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বন্যাপীড়িত মানুষ। গতকাল ফেনীর ছাগলনাইয়ায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কোন নদী বিপৎসীমার কত উপরে
শনিবার সকাল ৯টায় দেশের ৬টি নদীর পানি ৯টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছিল।

ওই সময় বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের ১১৬টি স্টেশনের মধ্যে ২২টি পয়েন্টে পানি বাড়ার প্রবণতা দেখা গেলও কমছিল ৮৪ পয়েন্টে আর অপরিবর্তিত ছিল ৪ পয়েন্টে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৯টায় কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

খোয়াই নদীর পানি হবিগঞ্জের বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর মৌলভীবাজার পয়েন্টে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।

চট্টগ্রামের রামগড় স্টেশনে ফেনী নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

সকালে কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেটের অমরশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে যাচ্ছিল, আর শেওলা পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুনামগঞ্জের মারকুলী পয়েন্টে এই নদীর পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।

আর ফেনীর পরশুরাম স্টেশনের সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হওয়ায় সেখানকার মুহুরী নদীর বিষয়ে তথ্য দিতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অতিভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক এই বন্যায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত দেশের অন্তত ১১টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এসব জেলায় প্রায় ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ওই সময় পর্যন্ত বন্যায় ১৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।