রাজীব নন্দী: বৃহত্তম চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্যাঞ্চল এবং কক্সবাজার গত তিনদিন ধরে জাতীয় পত্রিকাহীন! আকস্মিক প্রবল বন্যার কারণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ জেলার সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে চট্টগ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ফলে সংবাদপত্রের মফস্বল সংস্করণের গাড়ি পৌঁছাচ্ছে না গন্তব্যে। এই ঘটনাকে দেশের ইতিহাসে বিরল বলছেন অনেকে। যদিও টানা তিনদিন পর আজ (২৬ আগস্ট) পত্রিকা এসেছে চট্টগ্রামে।
দেশে এখন আলোচনার বিষয় ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থান ও হঠাৎ ধেয়ে আসা বন্যা। নতুন সরকারের প্রতি প্রত্যাশা, পলায়নবাদী নেতাদের পরিণতি, বন্যার পানির উঠানামা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিত্যনতুন ইস্যুতে যখন মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু, তখন তাকে ছাপিয়ে চট্টগ্রামের ইতিহাসে রচিত হলো আরেক অধ্যায়— জাতীয় পত্রিকাহীন চট্টগ্রাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা চট্টগ্রামের মাঝপথে ফেনী অঞ্চলে বন্যায় পথ তলিয়ে যাওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একাংশের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। ফলে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের প্রথম সংস্করণ বা মফস্বল সংস্করণ বোঝাই গাড়ি ফের ঢাকামুখী ফেরত গেছে।
সংবাদের বিদ্যায়তনিক পাঠে ও শ্রেণিকক্ষে একটি জনপ্রিয় সংজ্ঞা দেওয়া হয়– 'মাছের মতো সংবাদও পচনশীল'। মাঝরাস্তায় মাছ বোঝাই গাড়ি জ্যামে পড়লে মাছ যেমন পঁচে যায়, তেমনি দৈনিক সংবাদপত্রও ভোরবেলা পৌঁছতে না পারলে মাঝপথেই সেটি সেরদরে বেচা কাগজে পরিণত হয়।
প্রসঙ্গত, উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানির স্রোত ও টানা কয়েকদিনের বর্ষণে গত বুধবার থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের একাধিক অংশে তীব্র স্রোতে সড়ক-বাঁধ ভেঙে পড়ে। এতে তীব্র যানজটে বিপদে পড়েন হাজারও মানুষ। ফলে ঢাকা থেকে ছাপা কাগজের গাড়িও আর গন্তব্যে আসতে পারেনি। ফলে দেশের বৃহত্তম এই এলাকাটি ছিল ঢাকার ছাপা পত্রিকাহীন।
চট্টগ্রামে এভাবে টানা তিনদিন জাতীয় পত্রিকা পাওয়া যাবে না— এমনটি অবিশ্বাস্য বলছেন অনেকেই। যদিও অনলাইন প্রযুক্তির কারণে চট্টগ্রামের পাঠকরা ইন্টারনেটেই ছাপা কাগজের ই-কপি ও ইন্টারনেট সংস্করণ থেকে প্রতিনিয়ত আপডেট হয়েছেন।
চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই ঘটনাকে অভূতপূর্ব হিসেবে বলছে সাংবাদিক নেতা, সাংবাদিকতার গবেষক, হকার্স এবং সংবাদপত্রের পাঠক। গত তিনদিন চট্টগ্রামের চারটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভোরে এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের কোথাও ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় পত্রিকা নেই। তবে পাঠকের মধ্যে আগ্রহ আছে, তারা পত্রিকা স্ট্যান্ডে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছিলেন। কিন্তু দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও সংবাদপত্র মেলেনি।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাস ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকার ইতিহাস অনুসন্ধানী গবেষক শাহাব উদ্দিন নীপু। তিনি চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। পাকিস্তান আমলের সাংবাদিকতা, চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা, স্থানীয় জ্যোতি পত্রিকা ও এই অঞ্চলে মুদ্রণশিল্পের বিকাশ নিয়ে তার একাধিক জাতীয় পর্যায়ের গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে।
তিনি জানান, "নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের আগেপরে কিশোরবেলায় বাংলার বাণী পত্রিকা পাঠ দিয়ে তার সংবাদপত্র পাঠের শুরু। এরশাদ সরকারের জরুরি অবস্থা জারির সময়টায় সংবাদপত্র প্রকাশ ও বণ্টন-বিক্রয় বন্ধ হয়েছিল, এরপরে এই সাম্প্রতিক বন্যা একটি বিশেষ দিক। চট্টগ্রামে এমন অনেক পরিস্থিতি হয়েছিল বিশেষ কোনো একটি পত্রিকাকে প্রচার করতে কোনো গোষ্ঠী বাধা দিয়েছে, কিংবা সেদিনের সব কপি জ্বালিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক প্রতিবাদ হিসেবে; কিন্তু ঢাকায় ছাপা হওয়ার পর চট্টগ্রামে পৌঁছাতে না পারারা ঘটনা অভূতপূর্ব।"
একজন গবেষক হিসেবে তিনি এই তিন দিনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, "সমাজ ও সাংবাদিকতা নিয়ে ভবিষ্যৎ গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণে সংবাদপত্রের মুদ্রিত কপি একটি গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট। করোনাকালে কিছুদিন আমি চবির আর্কাইভ সেকশনে গিয়ে পুরানো পত্রিকা পাইনি। এই তিন দিনের বেলাতেও কি তাই হবে?"
তিনি আরো বলেন, "চট্টগ্রামের পাবলিক লাইব্রেরি, চবি গ্রন্থাগারের দুষ্প্রাপ্য শাখা, সিটি কর্পোরেশন গ্রন্থাগারসহ বিভিন্ন গ্রন্থাগারের একটি বড় কাজ দৈনিক পত্রিকার সংরক্ষণ। এই তিন দিনের ছাপা কাগজের অনুপস্থিতি কীভাবে ঘাটতি পূরণ করবে সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটি ভেবে দেখবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন।"
এদিকে, তিন দিন বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার (২৬ আগস্ট) পত্রিকা বণ্টন হয়েছে চট্টগ্রামে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ধীরগতিতে যান চলাচল শুরু হওয়ায় সকালে পত্রিকার গাড়ি এসে পৌঁছাতে পেরেছে।
অন্যদিকে, সড়কপথ ছাড়া রেলপথেও বিঘ্নিত হচ্ছে যোগাযোগ। ২১ আগস্ট অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও খোয়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মোট ৩১টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করে রেলওয়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে ১০ কিলোমিটার অংশ ছিল তিনদিন পানির নিচে। ফলে এই তিনদিন ট্রেনেও ছাপা পত্রিকা পাঠানো যায়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এই ঘটনা বিরল বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক, স্থানীয় দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক রাশেদ রউফ। তিনি বলেন, "পরিবহন ভোগান্তির কারণে পত্রিকা আসছে না। তবে আজাদী স্থানীয় ইস্যুতে সংবাদ পরিবেশনে এই সময়ে অধিকতর সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছে। পাঠকের আগ্রহ বেড়েছে এই কয়দিনে। জাতীয় কাগজের হার্ডকপি না পাওয়ায় আমাদের চাহিদাও বেড়েছে। ফলে অফিসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ পুরো দেশকে কাভার করার জন্য সর্বোচ্চ জনবল ব্যবহার করার।"
আজাদীকে প্রাচীন পত্রিকা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আগামী ৫ সেপ্টেম্বর আজাদী ৬৫ বছরে পড়বে। করোনাকলের কয়েকদিন ছাড়া এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিস্থিতি ছাড়া চট্টগ্রাম এভাবে জাতীয় পত্রিকাহীন কখনো ছিল বলে মনে পড়ে না। আজাদীকে বলা হয় চট্টগ্রামের মুখপত্র, আমরা গত কয়েকদিন সেই ভূমিকা পালন করছি। এমনকি সম্প্রতি ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও কারফিউয়ের মধ্যে অনেক জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক কলেবর সংক্ষিপ্ত করলেও আজাদী তার আকার ও পৃষ্ঠাসংখ্যা কমায়নি।"
তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমরা পাঠককে সংবাদ থেকে বঞ্চিত করছি না।"
গত তিনদিন ধরে প্রতিদিন ভোরে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম সংবাদপত্র হকার্স ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ জন সংবাদপত্র বিক্রেতা জাতীয় পত্রিকা ছাড়াই ঘরে ঘরে পাঠকদের চট্টগ্রামের কাগজ পৌঁছে দিচ্ছেন।
চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়ে সংবাদপত্রের একটি প্রাচীন স্ট্যান্ড বোয়ালখালী গনি স্টোর। এখানে দৈনিক ছাড়াও বিগত কিছূ সময়ের কাগজও পাওয়া যায়। এই দোকানের সত্ত্বাধিকারী চট্টগ্রামের সাংবাদিক পাড়ায় কাগজের গণিভাই নামে পরিচিত। তিনি জানান, "আমার দৈনিক তিন হাজার টাকা লস হলো। সবাই এসে ঢাকার কাগজ খুঁজছে। কেউ শুক্র ও শনিবার সাময়িকীর জন্য আলাদা করে খোঁজ নেয়।"
আবদুল গণি বলেন, ৭ জন পাঠক তার কাছে এই তিনদিনের পত্রিকার বুকিং দিয়ে রেখেছেন। অর্থাৎ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, সেই পুরানো কাগজও কেউ কেউ কিনতে চান।
রোববার সন্ধ্যায় তার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আবদুল গণি জানালেন, "চট্টগ্রামের প্রায় ২৫০ জন হকার্স গত তিনদিনে মারাত্মক লসে আছেন। করোনার শুরুর দিকে আমরা ঠিক এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম।"
কেন চট্টগ্রামে কাগজ আসছে না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কাগজের গাড়ি ফেনী-কুমিল্লা-নোয়াখালি এসে আটকে আছে। কিছু কিছু গাড়ি আবার ঢাকায় ফেরত গিয়েছে।
আবদুল গণির পত্রিকা বিক্রির বয়স ৪০ বছর। তিনি চট্টগ্রামের পুরানো একজন সংবাদপত্র বিক্রেতা। তিনি বলেন, "আমার জীবনে এই ঘটনা আর ঘটেনি।"
চট্টগ্রাম নগরের বাইরে খোঁজ নিয়েও একই হাহাকারের কথা জানা যায়।
চট্টগ্রাম নগর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। চবির তথ্য শাখায় কর্মরত মোহাম্মদ হোসেন বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন আমরা ২০টি জাতীয় ও ৫টি স্থানীয় পত্রিকা কিনে থাকি। কিন্তু গত তিনদিন ধরে চবিতে পত্রিকা নেই।"
তিনি বলেন, "রোববার পত্রিকার এজেন্ট মোহাম্মদ শফি বলেছিলেন পত্রিকা এসেছে। তবে এরপর অপেক্ষা করেও শফি আমাদের কোনো কাগজ দেননি।"
এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মোহাম্মদ শফির নম্বরে কল করা হলে (২৫ আগস্ট রাত ১০টা) তিনি কল রিসিভ করেননি।
রাঙামাটির স্থানীয় সাংবাদিক রিকস চাকমা বলেন, চার দিন ধরে রাঙামাটিতে পত্রিকা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রাঙামাটির পত্রিকা এজেন্ট, হকারসহ গ্রাহকরাও।
রাঙামাটির পত্রিকার এজেন্ট নিলয় দাশ বলেন, "পত্রিকা না আসায় আমার খুব ক্ষতি হচ্ছি। এছাড়া হকারেরাও পত্রিকা বিক্রি করে দৈনিক যে একটা আয় করেন, তাও করতে পারছেন না। অনেক গ্রাহক পত্রিকা কিনতে এসে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।"
"গত চার দিন ধরে পত্রিকা না আসায় আমাদের গ্রাহকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সম্ভবনা দেখা দিয়েছে," বলেন তিনি।
দৈনিক বনিক বার্তার রাঙামাটি প্রতিনিধি প্রান্ত দেবনাথ জানান, "চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী এলাকায় বন্যার পরিস্থিতির কারণে যানচলাচল ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে গত কয়েকদিন ধরে রাঙামাটিতে পত্রিকা না আসায় নিয়মিত গ্রাহকরা পত্রিকা পাচ্ছেন না। বাংলাদেশে পত্রিকার বাজার এমনিতেই এত ভালো না।"
"করোনার সময়ও দীর্ঘদিন পত্রিকা বন্ধ থাকায় মানুষ পত্রিকা পড়তে পারেনি। এভাবে যদি কয়েকদিন পর পর পত্রিকা বন্ধ থাকে, এতে পত্রিকা বাজারে এক সংকট সৃষ্টি হবে," যোগ করেন তিনি।
রাঙামাটি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সৈকত রঞ্জন চৌধুরী বলেন, পত্রিকা না আসার বিষয়টি খুব দুঃখজনক। তবে প্রকৃতির উপর তো কারো হাত নেই।
তিনি বলেন, "কিন্তু এভাবে যদি টানা কয়েকদিন ধরে
রাঙামাটি শহরে পত্রিকা আসতে না পারে, তাহলে একদিকে যেমন গ্রাহকরা দেশের
বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো জানা থেকে বঞ্চিত হবেন, অন্যদিকে
এখানে যারা পত্রিকা এজেন্ট ও হকার রয়েছেন, তারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন।"
কাপ্তাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্ত বলেন, "স্যোসাল মিডিয়ার
প্রভাবের পরও এখানে শত শত কপি সংবাদপত্রের পাঠক আছেন। গত তিনদিন ধরে
কাপ্তাই উপজেলায় জাতীয় কোনো পত্রিকা আসেনি।"
তিনি আরও বলেন, "আমি ১৯৯৬ সাল থেকে লেখালেখি করি, এই রকম ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। কাপ্তাই উপজেলা কমপক্ষে দিনে ৫০০ জাতীয় পত্রিকার গ্রাহক আছেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হতে বঞ্চিত হচ্ছেন পাঠকরা। কারণ লোকাল পত্রিকা গুলোতে স্থানীয় সংবাদ বেশি প্রাধান্য পায়। তাই জাতীয় নিউজ বা সারা দেশের সংবাদের জন্য জাতীয় পত্রিকার গুরুত্ব অনেক বেশি।"
আনোয়ারা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক নাবিদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব খবর বের হচ্ছে, তা পাঠক পরদিন কাগজে দেখতে চান। এখন ভুয়া খবরেও মানুষ অতিষ্ট। ফলে সত্যতা নিশ্চিত হতে সবাই কাগজ হাতে নিতে চান।
তিনি বলেন, "চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় জাতীয় দৈনিকের পাঠকরা বঞ্চিত হয়েছেন। আনোয়ারা উপজেলায় যেসব সংবাদকর্মী রয়েছেন, তারা অধিকাংশ তরুণ। তারা অধিকাংশই জাতীয় পত্রিকায় কর্মরত। সেদিক থেকে আনোয়ারার অধিকাংশ পাঠক ও স্থানীয় প্রশাসন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের আশায় থাকেন। আমার সাংবাদিকতার দীর্ঘ আট বছরে আমি এভাবে আমার কর্মরত দৈনিকটি চারদিন না পড়ে, না দেখে থাকিনি। সব মিলিয়ে পাঠক ও স্থানীয় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা পত্রিকা হাতে না পেয়ে হতাশ।"
প্রসঙ্গগত, সংবাদপত্রের মুদ্রণ সংস্করণ বাংলাদেশে চলতি বছর ছয় দিন বন্ধ থাকার ঘটনাটি ছিল অভূতপূর্ব।
রোববার রাত পৌনে বারোটা পর্যন্ত বাংলাদেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যাদুর্গত অঞ্চলগুলোয় গড়ে প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার পানি কমেছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
অনলাইনের দাপটে ছাপা পত্রিকার প্রতি পাঠকের আকর্ষণ হারিয়েছে, নাকি কমেছে তা গবেষণার বিষয়। কিন্তু এটি যে অভ্যাসগত তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষত ছাত্র গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বিশদে তথ্য জানার আগ্রহের সময় জাতীয় পত্রিকা না পাওয়া তথ্য বঞ্চিত হওয়ার মতোই ব্যাপার। পাঠক পত্রিকা পড়ে রেডিও-টিভিতে যা পাওয়া যায় না, তা জানার জন্য। এখন সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন সংস্করণে খবর আগে পেয়ে গেলেও খবরের পেছনের খবর, খুঁটিনাটি বিবরণ, বিশ্লেষণ ইত্যাদি জানার আগ্রহ থেকে পত্রিকার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে।
ঘটনা-দুর্ঘটনার বাংলাদেশে সংবাদকর্মীরা একদিকে ঢাকাতে বসে সংবাদপত্র ছাপতে পারলেও দেশের একটি অঞ্চলে সেই ছাপা পত্রিকা না পৌঁছানোর ঘটনা অভূতপূর্ব! যখন নিজেকে বিপন্ন করে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি ও বন্যায় পরিবার, বন্ধুবান্ধব ছেড়ে খবরের পেছনে ছুটতেই হচ্ছে সব সাংবাদিককে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়