পারিশ্রমিকের টাকা বন্যার্তদের জন্য দিচ্ছেন তাঁরা

পারিশ্রমিকের টাকা বন্যার্তদের জন্য দিচ্ছেন রিমু রোজা খন্দকার ও তানহা তাসনিয়া ও সালমা | কোলাজ

বিনোদন প্রতিবেদক: ভয়াবহ বন্যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিপদগ্রস্ত লাখো মানুষ। দেশের এসব বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এগিয়ে এসেছেন, আসছেন। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিপদগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় যেতে না পারলেও কেউ কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহযোগিতা করছেন। বিনোদন অঙ্গনের মানুষেরাও বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।

গত বৃহস্পতিবার তানহা তাসনিয়া ফেসবুক পেজে এ ব্যাপারে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আগেই ডেট দেওয়া ছিল, তাই শুটিং করতে হচ্ছে। কিন্তু মন অনেক খারাপ আমার। দেশ ভালো নেই। আমার দুদিনের শুটিংয়ের পারিশ্রমিক বন্যার্তদের জন্য দিতে চাই।’

তাহনা শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘আগে থেকে শিডিউল দেওয়া ছিল, তাই শুটিং করতে হচ্ছে। শুটিং বাতিল করলে সমস্যা হতো। কারণ যেসব দৃশ্য করা হচ্ছে, তার সঙ্গে অনেক শিল্পী জড়িত। শুটিং করছি, কিন্তু শুটিংয়ে মন নেই। ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে গেলে বানভাসি মানুষের করুণ দৃশ্যের ভিডিও দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’

তানহা আরও বলেন, ‘এবার বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আক্রান্ত মানুষের কষ্ট সহ্য করার মতো নয়। খাওয়ার সময় মনে পড়ছে। ঘুমাতে গিয়ে ঘুমাতে পারছি না। দুর্গত এলাকার অসহায় মানুষের মুখ ভেসে উঠছে। আমি তো তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। তাই যে দুদিন শুটিং করছি, তার পারিশ্রমিক আমারই পরিচিত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দিয়ে দিচ্ছি।’

তানহা তাসনিয়া মনে করছেন, এভাবে সবাই সবার জায়গায় থেকে এগিয়ে এলে, দেখাদেখি আরও অনেকেই এগোবেন। যদিও অনেক পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলীরা ইতিমধ্যেই অর্থ দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আবার দল ভাগ করে কেউ কেউ বন্যাদুর্গত বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছেও গেছেন।

গানের শিল্পী সালমা চলতি মাসে যে কটি গান রেকর্ডিং করছেন, সবগুলো গানের পারিশ্রমিক বন্যার্ত মানুষের জন্য দিয়েছেন। আজ রোববার দুপুরে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
সেখানে সালমা লিখেছেন, ‘আমার রেকর্ডিং করা গানের পারিশ্রমিকের পুরোটাই বন্যার্তদের সাহায্যার্থে  দিয়ে দিলাম। ইনশা আল্লাহ এই খারাপ পরিস্থিতি চলাকালীন যতগুলো কাজ করব, সবগুলোর পারিশ্রমিকই যুক্ত হবে বিপদগ্রস্ত মানুষের কল্যাণ তহবিলে।’

এ ব্যাপারে সালমা বলেন, ‘আমরা তো মানুষ। বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে বিপদগ্রস্ত শিশু, বয়স্ক সব বয়সের মানুষগুলোর কষ্ট দেখে মন কাঁদে। এঁরা তো আমার রক্তের কেউ নন। কিন্তু আমরা তো বাংলাদেশি। আমরা একই আঙিনায় বসবাস করি। আমাদের একটা দায় আছে। আমার অনেক টাকা নেই। যতটুকু আছে, তাই দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছি। এ সময়ে প্রতিটি মানুষেরই এগিয়ে আসো উচিত।’
তিনি দেশের বিত্তবানদের অনুরোধ করে বলেন, ‘আমাদের দেশে অসংখ্য মানুষের দেশ–বিদেশে প্রচুর অর্থ সম্পদ আছে। আপনাদের এক সমুদ্র অর্থ সম্পদ থেকে অল্প করে হলেও বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। আপনার সম্পদ কমবে না।’

এই ক্লোজআপ তারকা আরও বলেন, ‘দেশের বন্যা পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত ভবিষ্যতে যতগুলো গান করব, সব পারিশ্রমিক বন্যার্ত অসহায় মানুষের জন্য দিয়ে দেব।’

এদিকে ছোট পর্দার অভিনেত্রী রিমু রোজা খন্দকারও তাঁর দুটি নাটকের পারিশ্রমিক এরই মধ্যে বন্যার্তদের সাহায্যার্থে একটি মানবিক ফাউন্ডেশনের হাতে তুলে দিয়েছেন। গতকাল শনিবার তাঁর ফেসবুক পেজে এ–সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দিয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি দুই দিন শুটিং করেছিলাম, সেই পারিশ্রমিক বন্যার্তদের জন্য একটি সংস্থাকে দিয়ে নিজের ওয়াদা রাখতে পারলাম। আমিন।’

রিমু বলেন, ‘আমি তো সরাসরি বন্যার্তদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারছি না। কিন্তু আমি এ দেশেরই মানুষ। মানুষের বিপদে মানুষকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি তখন ছোট। আমার মা নায়িকা টিনা খান তখন বেঁচে ছিলেন। 

১৯৮৮ সালের বন্যায় আমার মাসহ চলচ্চিত্র শিল্পীরা মিলে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান করে বন্যার্তদের জন্য ফান্ড গঠন করেছিলেন। আমার বাবাও একজন সেনা অফিসার ছিলেন, তিনিও এভাবে মানুষকে সহযোগিতা করতেন। বাবা–মায়ের এমন কাজ আমাকে উদ্বুদ্ধ করে। আমার তো অনেক টাকা নেই। ছোট শিল্পী। দূর থেকে তাঁদের সহযোগিতা করতে যতটুকু পারছি, করছি।’

এই অভিনেত্রী এ–ও জানালেন, চলতি মাসে আরও দুটি নাটকে কাজ করার কথা। সেই কাজের পারিশ্রমিকও বন্যার্তদের জন্য দিতে চান তিনি।