খুলনায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন। সোমবার বিকেলে শহীদ শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি খুলনা: সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘খুব শিগগির পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পুলিশ বাহিনী যখন আবার সুন্দরভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে, তখন আমরা সেনানিবাসে ফেরত যাব। শেষ রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত ৯০ শতাংশের ওপরে থানাগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে। আর ঢাকায় ৮৫ শতাংশের বেশি থানায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি আশাব্যঞ্জক।’

আজ সোমবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় সেনাপ্রধান এ কথা বলেন। এর আগে তিনি খুলনা বিভাগীয় ও জেলার শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘দেশে অরাজক একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী নামানো হয়। ৫ আগস্ট ও তার পরবর্তী সময় আরও একটু ভিন্ন। এখানে অনেক ধরনের অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সংখ্যা দুই লাখ। এত বড়সংখ্যক পুলিশ বাহিনী যখন অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল, তখন এটাকে কার্যকর করা সেনাবাহিনীর জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছিল। তবে আমরা আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে সুন্দরভাবে এই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। আমরা পুলিশ বাহিনীকে প্রটেকশন দিচ্ছি।’

সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘খুলনা বিভাগের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক, যা একেবারেই স্বাভাবিক। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে যে অপরাধ সংঘটিত হয়, এখন সেটাও হচ্ছে না। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই। আমাদের আরও ভালোভাবে কাজ করতে হবে। পুলিশকে আরও সংগঠিত করতে হবে। খুব শিগগির পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমরা তা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। এখন পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। তখন পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবিসহ সব নিয়মিত বাহিনী সন্ত্রাস দমনে তাদের অভিযান পরিচালনা করবে।’

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, এ পর্যন্ত ২০টি জেলায় ৩০টির মতো সংখ্যালঘুবিষয়ক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই লুটপাট ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ; যার অধিকাংশই রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্ট।

রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘তাঁরা তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যাক। তবে কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ যেন তাঁরা না করেন। তাঁরা বুঝবেন জনগণের এখন দাবিটা কী? জনগণ যদি অরক্ষিত থাকে, যদি কোনো অশান্তি বিরাজ করে, আমি নিশ্চিত ওনারা সেই রাজনীতি করেন না। সেটা কোনো দেশের রাজনীতি হবে না। সবাই আমাদের সহযোগিতা করলে আমরা অবশ্যই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে পারব। এই দেশ হবে সব ধর্মের মানুষের নিরাপদ স্থান। সেই লক্ষ্যে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।’

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, ‘ডাকাতির ঘটনার খবরগুলোর ৮০ শতাংশ আতঙ্ক, আর ২০ শতাংশ সত্য। মানুষের মধ্যে হানাহানির এ জিনিসটা আস্তে আস্তে কমে আসছে। অতীতেও যখন রাজনীতি ছিল, তখন কিছু রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে, যেটা কাম্য নয়। আমরা সবাই মিলে এটা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসব। রাজনীতি থাকবে, থাকতেই হবে। সেখানে মানুষ কথা বলবে, মিটিং হবে, মিছিল হবে। কিন্তু এটা যেন ধ্বংসাত্মক পর্যায়ে না যায়, ধ্বংসাত্মক কোনো কার্যকলাপ আমরা চাই না। এটা কখনোই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।’