হবিগঞ্জে কারফিউ, সংসদ সদস্যের বাড়ির সামনে সরকারদলীয়দের অবস্থান

হবিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের শুক্রবার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। গতকালের ছবি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনার জেরে আজ শনিবার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক জিলুফা সুলতানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে সেখানে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও জনতা হবিগঞ্জ কোর্ট মসজিদের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শহরের নানা স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল আসতে শুরু করলে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টাউন হল এলাকার দিকে যাত্রা করেন তাঁরা। এলাকাটিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগে থেকেই (১৫ আগস্ট আসন্ন শোক দিবসকে ঘিরে) কর্মসূচি পালন করছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবু জাহির ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরীসহ দলের অন্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, একপর্যায়ে তাঁরা পিছু হটলে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে শহরের কালীবাড়ি এলাকার কাছে সংসদ সদস্য মো. আবু জাহিরের বাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও হামলা চালানো হয়। বাড়ির সামনে ৪ থেকে ৫টি মোটরসাইকেলেও আগুন দেন হামলাকারীরা। এ সময় সংসদ সদস্য ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরা বাড়ির ভেতরে অবস্থান করছিলেন। পরে খবর পেয়ে সেখানে আসার চেষ্টা করে পুলিশ। আসার পথে শহরের তিনকোনা পুকুর পাড় এলাকায় জেলা ছাত্রদলের কয়েক শ নেতা-কর্মীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ওই এলাকায় অবস্থিত হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (বানিয়াচং সার্কেল) অফিস ও জেলা শিক্ষা অফিসে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেয় হামলাকারীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ওই সময় আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে মোস্তাক মিয়া (২৪) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন। পরে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মইন উদ্দিন চৌধুরী এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গতকালের সংঘর্ষে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশের শরীরে ছররা গুলির ক্ষত দেখা গেছে।

গতকাল সন্ধ্যার পর সংঘর্ষ থামলে শহরজুড়ে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছিল। বাড়তি টহলে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যেরা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাসায় পাহারা বসিয়েছেন উপজেলার রিচি গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাসার সামনে অবস্থান নেন।