বাংলাদেশে শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র, অর্থ উপদেষ্টার আশ্বাস

বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আজ রোববার ঢাকায় সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। প্রসঙ্গক্রমে আলোচনায় অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধার (জিএসপি) বিষয়টিও উঠে আসে। রানা প্লাজা ধসের পর বারাক ওবামা প্রশাসন ২০১৩ সালে বাংলাদেশের জিএসপি বাতিল করে।

সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ২৩ জুলাই ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে ঢাকায় সে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের দায়িত্ব পালন করে আসছেন হেলেন লাফেভ।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শ্রম অধিকারের বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করা হবে। হেলেন লাফেভকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। আর দেশটির কিছু শর্ত মানলে জিএসপি আবার পাওয়া যাবে বলেও তিনি মনে করেন। উপদেষ্টা বলেন, ‘জিএসপির সব শর্ত আমরা পালন করতে পারছি না। আমি এখন বক্তব্য দিয়ে দিলাম। দেখা গেল হলো না। তবে এসব কিছু এত কঠিন না আমাদের জন্য। এটাও হবে।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে আমাদের জিএসপিসহ কিছু সমস্যা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কোম্পানির অভিযোগ ছিল যে তারা নিজ দেশে অর্থ পাঠাতে পারছে না। আবার আমাদের অনেক কোম্পানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। আজকে আমরা এত গভীরে আলোচনা করিনি।’ সমস্যা নিরসনে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবে বলে জানান তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক—দুই দিক থেকেই যুক্তরাষ্ট্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। অর্থনৈতিক দিক থেকে যদি বলি, বাগেরহাট ও ফিরোজপুরসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ বাঁধ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা বলেছে এত দিন দর-কষাকষি ছিল একটু ধীরগতির। আমরা তাদের বলেছি, আমরা বিরাট একটা ঋণে আছি। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের ঋণ নেই। তারা যেসব সাহায্য করেছে সেগুলো ঋণ নয়, অনুদান।’

কৃষিসহ আরও কিছু খাতে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করছে জানিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের আরও সহযোগিতা দরকার। বিশেষ করে জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের জন্য সহযোগিতা বাড়াতে বলেছি। বন্যার কারণে বাংলাদেশের জনগণ ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তা–ও তুলে ধরেছি।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, দেশের বেসরকারি খাত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বলেছি যে যৌথভাবে বিনিয়োগ করেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতে পারে।’

শ্রম অধিকার নিয়ে আলোচনা সম্পর্কে বিশদ কিছু জানাননি অর্থ উপদেষ্টা। বিদায়ী সরকারের আমলে গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের একটি দল বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়ে গেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

ওই কর্মপরিকল্পনায় মোটাদাগে ১১টি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রথমটিই হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক ও শ্রম অধিকারকর্মীদের যাঁরা নিপীড়ন করেন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালান, তাঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এরপরই রয়েছে শ্রমিকনেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কাজ করে, এমন কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা। এ ছাড়া রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলো যে মানের অধিকার ভোগ করে সে অনুযায়ী বাংলাদেশের শ্রম আইনের সংশোধন এবং বিদ্যমান শ্রমবিধির সংশোধন।

আরও যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোর (ইপিজেড) শ্রমিকেরা যাতে পুরোদমে ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া; বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইনের ৩৪ নম্বর ধারা সংশোধন; বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় (এসইজেড) সেটির প্রয়োগ এবং সেখানকার শ্রমিকেরা যাতে সংগঠিত হতে পারেন ও সম্মিলিতভাবে দর-কষাকষিতে সক্ষম হন, তা নিশ্চিত করা; ট্রেড ইউনিয়ন করার আবেদনের প্রক্রিয়া ৫৫ দিনের মধ্যে শেষ করা; শ্রম অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার বিদ্যমান অনলাইন নিবন্ধন পোর্টালে অপেক্ষমাণ থাকা সব আবেদনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ; বার্ষিক বাজেটের মাধ্যমে শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ ও এ জন্য তহবিল বরাদ্দ করা; আরও শ্রম পরিদর্শকের পদ অনুমোদন এবং নিবন্ধন বিলম্বিত বা বাধাগ্রস্ত করার অভ্যাস বন্ধ করা ইত্যাদি।