পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছেন ইউক্রেনের সেনারা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর এই প্রথম পাল্টা আক্রমণ হিসেবে রাশিয়ার এতটা ভেতরে ঢুকেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, তাদের বাহিনী তলপিনো ও অবশ্চি কোলোদেজ গ্রামগুলোর কাছে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ করছে। কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের সেনাদের অনুপ্রবেশের ষষ্ঠ দিন ছিল গতকাল রোববার।
তার আগের দিন শনিবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রথমবার সরাসরি তাঁর সামরিক বাহিনী রাশিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে বলে স্বীকার করে নেন। জেলেনস্কি বলেন, এই গ্রীষ্মে কুরস্ক থেকে ইউক্রেনে প্রায় দুই হাজার হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। তিনি আরও বলেন, ‘কামান, মর্টার, ড্রোন, এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তথ্যও আমাদের কাছে আছে। এ ধরনের হামলার যথাযথ জবাব প্রাপ্য।’
ইউক্রেনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, ইউক্রেনের হাজারের বেশি সেনা ওই অভিযানে অংশ নিচ্ছে। প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার সীমান্তরক্ষী বাহিনী এ ঘটনাকে ছোট অনুপ্রবেশ বললেও প্রকৃতপক্ষে এটি তার থেকে অনেক বড় ঘটনা।
ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে মাঝেমধ্যেই কিয়েভ–সমর্থিত নাশকতাকারী নানা গোষ্ঠী সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ায় অনুপ্রবেশ করেছে। কিন্তু কুরস্কে কিয়েভের প্রচলিত সামরিক বাহিনীর এই আক্রমণকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে দেশটির সবচেয়ে বড় সমন্বিত আক্রমণ বলা হচ্ছে।
ইউক্রেনের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আক্রমণ করেছি। লক্ষ্য শত্রু ভূমিতে (যুদ্ধের) বিস্তার ঘটানো, সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি করা এবং রাশিয়ার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলা, যাতে তারা তাদের নিজেদের সীমান্ত সুরক্ষা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।’
এ বিষয়ে গতকাল রোববার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, তাদের বাহিনী শত্রুদের সাঁজোয়া যানসহ একটি চলমান দলের রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে প্রবেশের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
তবে রাশিয়া ইউক্রেনের সেনাদের তাদের ভূখণ্ডের গভীরে প্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার দাবি করলেও যে দুটি গ্রামের কাছে লড়াই চলার কথা তারা বলেছে, সে দুটি গ্রাম ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ২৫ কিলোমিটার ও ৩০ কিলোমিটার গভীরে।
এর অর্থ ইউক্রেন বাহিনী ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করেছে।
ইউক্রেনের সেনাদের অনুপ্রবেশের একটি ভিডিও অনলাইনে দেখা যাচ্ছে। সেটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে বিবিসি। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রাশিয়ার বাহিনী লেভসিঙ্কা গ্রামের কাছে হামলা করেছে। কুরস্ক অঞ্চলে অবস্থিত রুশ ওই গ্রাম সীমান্ত থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে।
কুরস্ক অঞ্চলের বেশ কিছু স্থাপনা দখলের দাবিও করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। সীমান্ত থেকে রাশিয়ার তিন কিলোমিটার ভেতরের গ্রাম গুয়েভো। সেখানে একটি প্রশাসনিক ভবন থেকে ইউক্রেনের সেনাদের রাশিয়ার পতাকা খুলে ফেলতে এবং সেই মুহূর্ত মোবাইলে ভিডিও করতে দেখা যায়।
সভেরডলিকোভো এবং পোরোজেও ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রশাসনিক ভবন দখল করে নেওয়ার ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। এ ছাড়া সুদঝা শহরের কাছে এখন তুমুল লড়াই চলছে। এই শহরে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বসবাস করেন।