অনুকূল পরিস্থিতির অপেক্ষায় আ.লীগ

আওয়ামী লীগ | গ্রাফিক:পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সংকটকালে বুঝেশুনে পা ফেলার কৌশল নিয়েছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। সামনের সারির নেতাদের আপাতত প্রকাশ্যে আসার সম্ভাবনা দেখছেন না দলটির নেতারা। তবে পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে এলেই মধ্যম সারির নেতাদের দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এক এমপি রোববার বলেন, দলীয় সভাপতি (শেখ হাসিনা) নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এখনই নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার জন্য কোনো ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে কিছু নেতা প্রকাশ্যে আসবেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে ৫ আগস্ট সরকারপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই দিন দুপুরের পর দলটির কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। সারা দেশে আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় দলটির নেতা-কর্মীদের বাসা, বাড়ি, দলীয় এবং ব্যক্তিগত কার্যালয়। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ১৫ আগস্ট দেশের কিছু জায়গায় শোক দিবস পালন করেন তাঁরা। সামনে কর্মসূচি আরও দৃশ্যমান হতে পারে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।

আওয়ামী লীগের আটজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদত্যাগ করে দলীয় সভাপতির দেশ ছাড়তে হবে এমন পরিস্থিতি কখনোই তাঁরা কল্পনা করেননি। তাই হঠাৎ তৈরি হওয়া পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে, যাতে পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাঁদের প্রতিকূলে চলে গেছে। যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হলে এতে রাজনৈতিক মাঠ কিছুটা অনুকূলে আসবে। সে ক্ষেত্রে দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতা, গত সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা গ্রেপ্তার হবেন, একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতও চাপে পড়বে বলে মনে করেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যাঁরা জনপ্রতিনিধি, কিংবা সরকারের অংশ নন, তাঁরা তেমন সমস্যায় পড়বেন না বলে তাঁদের ধারণা।

দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরাই তো অন্ধকারে আছি। সেখানে কর্মীদের কী অবস্থা হতে পারে, তা সবার বোঝার কথা। নতুন সরকার তো এখনো পুরোদমে কাজ শুরু করেনি। তাঁদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক মনে হলে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যাঁরা তেমন আলোচনায় ছিল না, তাঁদের কয়েকজন প্রকাশ্যে এসে দলের পক্ষে বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া শুরু করতে পারেন।’

সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেয়েছি আমরা। সেটা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে। এখন সামনে আরেকটা ধাক্কা অপেক্ষা করছে, সেটা হচ্ছে পুলিশি ধরপাকড়। সেটাও সামলে উঠতে হবে। এতে কিছুটা সময় লাগবে।’

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর হামলার শিকার নেতা-কর্মী, তাঁদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, দলীয় কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রাথমিকভাবে করা হচ্ছে। কারা কোথায় মারা গেছেন, সে তালিকাও তাঁদের কাছে আছে। এমন তথ্যচিত্র আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। পরে এসব তালিকা তথ্য আকারে বিভিন্ন দূতাবাসেও দেওয়া হবে।

দলটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও সাবেক এক এমপি বলেন, ‘বিপর্যয় কাটানোর জন্য আমাদের কিছুটা সময় ধৈর্য ধরতে হবে। সেটা না করে তাড়াহুড়ো করলে বিপদ না কমে উল্টো বাড়বে। ১৫ আগস্টের কর্মসূচির মাধ্যমে কিছুটা ধারণা নিশ্চয়ই পাওয়া গেছে।’