একজনকে মারধর করা হচ্ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাসা ও আশপাশের এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নিয়েছে একদল মানুষ। সকাল থেকে ওই বাড়ির সামনে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন ব্যক্তিকে মারধর ও লাঠিপেটা করার ঘটনা ঘটছে।    

এ দিকে আজ শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসার কথা থাকলেও, আওয়ামী লীগের কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে সেখানে আসতে দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২ নম্বর কর্মসূচি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এই ঘোষণার পর গতকাল বুধবার মধ্যরাত থেকে ৩২ নম্বর ঘিরে চারপাশ দখলে রেখেছে ছাত্র-জনতা।

একজনকে ঘিরে ধরা হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রাবাদ মোড় থেকে ৩২ নম্বর ও মেট্রো শপিংমলের সামনে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। একটু পর পর মিছিল নিয়ে বের হচ্ছে, ধানমন্ডি ২৭ ঘুরে আবার ৩২ এসে জড়ো হচ্ছেন তারা। সড়কের দুই পাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। যা ভেদ করে কারও যাওয়ার সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগের সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই তল্লাশি করছে অবস্থানকারীরা। অনেকের মোবাইল তল্লাশি করে মারধর করা হচ্ছে। বিশেষ করে কালো পাঞ্জাবি পরিহিত কাউকে দেখলেই তাদের তল্লাশি করতে দেখা গেছে।

অনেকের মোবাইল তল্লাশি করে মারধর করা হচ্ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

অবস্থানকারীদের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা স্টেট কলেজ, ঢাকা কলেজ, মুনশি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আইডি কার্ড ঝোলানো তরুণ-যুবকদের দেখা গেছে। তবে তাদের সঙ্গে সাধারণ অনেককেই দেখা গেছে। ৩২ নম্বরের সড়কের সামনে দিয়ে চলাচলকারী বাস থেকে কাউকে ভিডিও করতে দেখলে থামিয়ে তা ডিলিট করাতে দেখা গেছে।

পড়ে আছে ভাঙচুর করা গাড়ি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আজ ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে একদল বিপথগামী সেনাসদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের এই বাড়িতেই বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবার হত্যা করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় ১৫ বছরের শাসনকালে প্রতিবছর ১৫ আগস্ট বহু মানুষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসতেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

কালো পোশাক দেখলেই দলবলে দৌড়ানি দিয়ে মারধর করা হচ্ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এদিন ৩২ নম্বরের এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাসা ও আশপাশের এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এ দিকে কয়েকজন ফুলের তোড়া নিয়ে এককভাবে আসলে তাদের মারধর করা হয়। কিছুক্ষণ পর পর মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে—সন্দেহজনক কাউকে পেলে নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভেতরে রাখার জন্য। গত এক ঘণ্টায় কমপক্ষে ১০জনকে মারধর করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভেতরে আটকে রাখতে দেখা গেছে।

এ দিকে আইনশৃঙ্খলায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ৩২ নম্বরের সামনে অবস্থান করছেন। আরও বেশ কিছু পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্য মেট্রো শপিংমল মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন।
মারধরের শিকার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এ দিকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সপ্তাহব্যাপী ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ এর অংশ হিসেবে সারা দেশে ‘সর্বাত্মক অবস্থান কর্মসূচি’ ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর শাহবাগে কেন্দ্রীয় জমায়েত হওয়ার কথা ছিল তাদের।

গতকাল বুধবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সপ্তাহব্যাপী রেজিস্ট্যান্স উইক-এর অংশ হিসেবে সারা দেশে সর্বাত্মক অবস্থান কর্মসূচি। সারা দেশের সব ছাত্রজনতাকে এ কর্মসূচি সফল করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।