ড. মুহাম্মদ ইউনূস | অলংকরণ: পদ্মা ট্রিবিউন |
বাসস, ঢাকা: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগী শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নামে-বেনামে কত টাকা ঋণ আত্মসাৎ করেছেন, তার হিসাব করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং তা বিদেশে পাচার করেছেন, যার সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ চলমান। আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ লাখ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ না করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ধরনের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইতিমধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (জিআইবি), ইউনিয়ন ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ব্যাংকগুলোর নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আত্মসাৎ হওয়া অর্থের প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং তাদের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থের প্রকৃত পরিমাণ নির্ণয়ের লক্ষ্যে নিরীক্ষা (অডিট) কার্যক্রম শুরু করা হবে।
অর্থ আত্মসাৎকারী ব্যক্তিদের বিচারের প্রতি সরকারের কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহায়তা নিয়ে আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে। অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চেয়ে ইতিমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে সরকার।
শিগগিরই ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে আরও জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ব্যাংকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করবে কমিশন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠনের জন্য ছয় মাসের মধ্যে একটি বাস্তবায়নযোগ্য রোডম্যাপ প্রণয়ন করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের লক্ষ্য হলো সব আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পরিপালনে সক্ষম একটি শক্তিশালী ব্যাংকিং খাত গড়ে তোলা। তবে এ উদ্দেশ্য সফল করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়, আন্তর্জাতিক কারিগরি সহায়তা ও অর্থের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার অর্থ আত্মসাৎকারীদের দেশি-বিদেশি সম্পদ অধিগ্রহণ এবং বিদেশ থেকে ফেরত এনে ব্যাংকগুলোকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর এই পুনর্গঠন এবং আর্থিক খাতের কাঠামোগত সংস্কার সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে সরকার বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।