লক্ষ্মীপুরে মান্দারী ইউনিয়নের চতইল্লা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ফাতেমা খাতুন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর: পাকা বসতঘর, গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু নিয়ে সুখের সংসার ছিল ফাতেমা খাতুনের। কয়েক বছর আগে স্বামী আবু তাহের মারা যাওয়ার পর থেকেই যেন বারবার হোঁচট খেয়েই চলেছেন জীবনযুদ্ধে। শেষ আশ্রয় ভাঙা বসতঘরটাও এবারের বন্যায় তলিয়ে গেছে। একটু ত্রাণের আশায় ঘুরছেন এদিক-সেদিক। কিন্তু ১০ দিনেও মেলেনি এক প্যাকেট ত্রাণ।
ফাতেমা খাতুন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের চতইল্লা গ্রামের বাসিন্দা। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি প্রথম আলোকে জানান, তিন মেয়েকে নিয়ে তাঁর পরিবার পানিবন্দী। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাননি। ত্রাণের আশায় তিনি বাজার এলাকায় এসেছেন। তাঁর মতো হাজারো বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এই জীবনে বয়স্ক ভাতা পাননি, এমনকি বিধবা ভাতাও দেওয়া হয়নি বলে জানান ফাতেমা।
‘৬০ বছর বয়সে কখনো মান্দারী এলাকায় বন্যার পানি দেখিনি। অভাব–অনটনের কারণে আমাকে আর কত কাঁদতে হবে? এত কষ্টের জীবন আমি চাই না’, আক্ষেপ করে এ কথা বলেন ফাতেমা।
লক্ষ্মীপুর জেলার ৯০ ভাগ এলাকাই এখন পানির নিচে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী। দুর্গত এলাকার বেশির ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া জানান, এ পর্যন্ত ৭৮০ মেট্রিক টন চাল দুর্গত এলাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নগদ ৩০ লাখ টাকাও দেওয়া হয়েছে বানভাসি মানুষের জন্য।
গতকাল বুধবার বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিঘলী, চরশাহী, বাঙ্গাখাঁ ও মান্দারী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় পানির কারণে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত পানির কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানকার পানিবন্দী মানুষদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণে নৌকার কোনো বিকল্প নেই। মান্দারী-দিঘলী সড়ক পানিতে ডুবে থাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। যে পরিমাণ পানির চাপ, সে হিসেবে রেগুলেটর দিয়ে বের হতে পারছে না। এ ছাড়া রায়পুর ও রামগঞ্জে পানি কিছুটা কমেছে। রামগতি ও কমলনগরে বেড়িবাঁধের বাইরে ভুলুয়া নদী এলাকায় অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। নোয়াখালীর পানি এসে ভুলুয়া নদীতে যুক্ত হচ্ছে।