আগ্নেয়াস্ত্র | প্রতীকী ছবি |
নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসান জানান, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাঁদের আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, দেশে এখন বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা কমবেশি ৫০ হাজার। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি অস্ত্র রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে। তাঁদের বেশির ভাগই আবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে বিভিন্ন সময় বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের ঘটনা ঘটে। রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকেরা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করেন। কখনো কখনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে পরে সেটিকে বৈধ অস্ত্র বলে দাবির ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশির ভাগ সময়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে নিশ্চুপ ভূমিকায় থাকতে দেখা গেছে।
যেমন গত বছরের নভেম্বরে ময়মনসিংহের নান্দাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শন করেন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের জামাতা জাহিদ হাসানের দেহরক্ষী কামরুজ্জামান। এই অস্ত্রের লাইসেন্স কামরুজ্জামানের নামে। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন আবদুস সালামের মেয়ে (জাহিদের স্ত্রী) ওয়াহিদা ইসলাম।
‘আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬’ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নিজের লাইসেন্সের বিপরীতে নেওয়া অস্ত্র শুধু আত্মরক্ষার জন্য বহন ও ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যের ভীতি বা বিরক্তি তৈরি হতে পারে, এমন ক্ষেত্রে অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। এটা করলে তাঁর অস্ত্রের লাইসেন্স তাৎক্ষণিকভাবে বাতিলযোগ্য হবে।
এর আগে গত বছরের ২২ মে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে মিছিল করে আলোচনায় আসেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রদর্শিত আগ্নেয়াস্ত্রটি বৈধ। এর লাইসেন্স তৎকালীন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুরের নামে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল।
নিয়ম অনুযায়ী, অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি করে ভয় দেখানো হলে থানা-পুলিশ অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করার জন্য জেলা প্রশাসনে প্রতিবেদন দেবে। জেলা প্রশাসন লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা নেবে। তবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন তখন এই অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেনি।
এসবের বাইরে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ বিক্ষোভ দমনেও বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করেছেন। যেমন গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মাঠে নামেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন ওরফে লাক্কু। তাঁর নামে দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স আছে বলে তখন জানিয়েছিল পুলিশ। একটি শটগান এবং অন্যটি রিভলবার। সেদিন তিনি যে অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন, সেটি বৈধ নাকি অবৈধ, সে বিষয়ে খোঁজই নেয়নি পুলিশ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিতের সিদ্ধান্ত এল।