লালপুরে অটোরিকশা থেকে কেউ চাঁদা নিচ্ছেন না, স্বস্তিতে চালকেরা

নাটোরের লালপুর বাজারের অটোরিকশার স্ট্যান্ড | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি লালপুর: নাটোরের লালপুরে সড়কে চলাচল করা সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদা তোলা বন্ধ হয়েছে। গত ৫ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন সিএনজি স্ট্যান্ডে চালকদের কাছ থেকে কেউ চাঁদা আদায় করতে আসেননি। এতে স্বস্তি প্রকাশ করছেন চালকেরা। 

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে লালপুর ত্রিমোহনী চত্বর ঘুরে জানা গেছে, লালপুর থেকে প্রতিদিন জেলার বনপাড়া, রাজশাহীর বাঘা, পাবনার ঈশ্বরদীসহ বিভিন্ন স্থানে চার শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এসব স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন নামে দৈনিক চাঁদা তোলা হতো। বিভিন্ন সময়ে শাসক দলের নেতাদের ইন্ধনে অটোরিকশা সমিতির প্রভাবশালী নেতারা এসব চাঁদাবাজির নেতৃত্বে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বিগত সরকারের মদদপুষ্ট নেতারা পলাতক রয়েছেন। এরপর শিক্ষার্থীরা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করাসহ তদারকি শুরু করলে কাউকে চাঁদা তুলতে দেখা যায়নি।

অটোচালকেরা জানান, অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশনবিহীন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সমিতিতে নতুন গাড়ি অন্তর্ভুক্ত করানোর জন্য ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হতো চালকদের। তবে এসব বিষয়ে নিরাপত্তার অভাবে কেউ মুখ খোলেন না। প্রশাসন ও গণমাধ্যমের তৎপরতায় সড়কে মাঝেমধ্যে চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও স্ট্যান্ডগুলোতে চেইন মাস্টারের নামে চাঁদা উত্তোলন করা হতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অটোচালক জানান, তাঁরা বিভিন্নভাবে জমানো টাকা দিয়ে বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অটোরিকশা কিনেছেন। কিন্তু তা সড়কে নামাতে গিয়ে সমিতিতে ভর্তি, মাসে অনন্ত ৩০০ টাকা চেইন মাস্টারের চাঁদা, এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় গেলে বাড়তি চাঁদা দিতে হতো। সড়কে চলাচলকারী ৪০০ যানবাহন থেকে মাসে চাঁদা আদায় করা হতো লাখ লাখ টাকা। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো চালক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো টাকা ব্যয় করতে দেখা যায়নি। এখন স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি না হওয়ায় চালকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের লালপুর উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুল মোত্তালেব রায়হান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালপুর উপজেলার সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ বাকি বলেন, ‘আমরা চাই সড়কে চাঁদাবাজি চিরদিনের জন্য বন্ধ হোক। যারাই এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার। আর ভবিষ্যতে যদি কেউ আবারও চাঁদাবাজিতে জড়িত হয়, তাঁদের অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। নইলে তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘সড়কে কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করার চেষ্টা করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’