সিলেটে আন্দোলনকারীদের মিছিলে পুলিশ গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে আখালিয়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি সিলেট: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী-জনতার সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত চলছিল।

সংঘর্ষে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলিতে ২৫০ থেকে ৩০০ জন আহত হয়েছেন বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন। অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের হামলায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সারা দেশে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব প্রার্থনালয়ে প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ শীর্ষক শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল আজ। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের বাধার মুখে তাঁরা সেখানে অবস্থান নিতে পারেননি।

বিকেল চারটার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের আখালিয়া এলাকার মাউন্ট এডোরা হসপিটালের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে শান্তিপূর্ণ ‘গণমিছিল’ কর্মসূচি পালন করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সিলেটে আন্দোলনকারীরা আখালিয়া এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি করছে। শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পর বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সড়কে ছড়িয়ে পড়েন। এরপর তাঁরা একাধিকবার আঞ্চলিক মহাসড়কে ওঠার চেষ্টা করেন। তখন আবার তাঁদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও দফায় দফায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী তেমুখী, সুরমা আবাসিক এলাকা, তপোবন, আখালিয়া, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা ও বাগবাড়ি বর্ণমালা পয়েন্ট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে থেমে থেমে ছাত্র-জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, পুলিশের হামলায় ২৫০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থী, জনতা, সাংবাদিক ও পথচারী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পথচলতি এক কিশোরসহ অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহতও হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে পুলিশের সাত সদস্য আহত হয়েছেন।

সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা থেকে অন্তত ১২ জনকে আটক করে পুলিশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পুলিশের দাবি, জনভোগান্তি তৈরি করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের আখালিয়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ তৈরি করেছিল। পুলিশ বারবার তাঁদের সরে যেতে অনুরোধ করেছে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে।

মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিকেল চারটার দিকে সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি করলে পুলিশ তাঁদের সরে যেতে বলে। তবে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল বলে তিনি জানান।