বগুড়ায় শ্রমিক দল নেতা হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা, জয়সহ ৫৫৭ জন আসামি

শেখ হাসিনা | অলংকরণ: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গাবতলী পৌর শ্রমিক দলের সহসভাপতি জিল্লুর সরদার নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করে মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে বগুড়া সদর থানায় দায়ের করা মামলায় আসামি হিসেবে ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৪০০ জনকে।

জিল্লুর সরদারের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গোড়দহ উত্তরপাড়া গ্রামে। নিহত জিল্লুর সরদারের স্ত্রী খাদিজা বেগমের করা এই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন মন্ত্রী, পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যার ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনার পাশাপাশি মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন প্রমুখ।

এ ছাড়া আসামি হিসেবে আরও আছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর রশিদ ও বিপ্লব কুমার, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কাহার আকন্দ, সাবেক এএসপি ফজলুল হক, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান, এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক সফিউল্লাহ, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নাটোরের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান মজনু, বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান, বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা আলম ও রেজাউল করিম বাবলু, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য অপু উকিল প্রমুখ।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া শহরের প্রধান সড়কে ঝাউতলা এলাকায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ এজাহার নামীয় ১ থেকে ২৩ নম্বর আসামির নির্দেশে এবং মজিবর রহমানসহ ৯ জনের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা রিভলবার, পিস্তল, বন্দুকসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁরা ককটেল ও পেট্রলবোমা হামলা করেন। ছাত্র-জনতার মিছিলে ছিলেন জিল্লুর সরদার।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, হামলার পর ছাত্র-জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে দৌড়াতে থাকলে জেলা যুবলীগের সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে জিল্লুর সরদারকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। গুলি জিল্লুরের বুকে লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে গাবতলী উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি রায় তাঁর হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে জিল্লুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন জিল্লুরকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। পরে সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কমর উদ্দিন নামের এক রিকশাচালক নিহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৮২ জনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। এ ছাড়া শিক্ষক সেলিম হোসেন (৩৫) হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা করা হয়।

অন্যদিকে ২০১৮ সালে শিবগঞ্জে বিএনপির নেতা শাহ আলম সুজাকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ ৮০ জনকে আসামি করে আদালতে গত বৃহস্পতিবার একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এর বাইরে বিস্ফোরক আইন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১৪০ জনের নামে বগুড়া আদালতে আরও একটি মামলা হয়।