ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির আয়োজিত ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিকেলে গড়েয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার রোষানলে শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। এখন গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কোথায়? ওই ভারতের দিল্লিতে। এখন সেখান থেকেই শুরু করেছেন নতুন এক চক্রান্ত। এখন আমাদের হিন্দু ভাইদের ঢাল হিসেবে আগে বাড়ায় দিতে চায়।’

মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে সদর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা যখন আন্দোলনে নামল, তখন সরকার ছয়জনকে হত্যা করল। এই হত্যার পরে ছাত্ররা গর্জে উঠল। ছাত্রদের রুখতে কারফিউ দেওয়া হলো। ছাত্ররা সেই কারফিউ অস্বীকার করে রাস্তায় নেমে পড়ল। তাদের সঙ্গে লাখ লাখ মানুষও নেমে পড়ল। মানুষ বুক পেতে দিয়ে বলল, “গুলি কর, আমরা সরে যাব না।” এ অবস্থায় শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল। পালিয়েও লাভ হবে না, আমরা আগেও বলেছিলাম, কোন দিকে পালাবে তুমি? কোনো দিকেও পথ নাই। উত্তরে পর্বতমালা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর—কোনো পালাবার পথ নাই। আজকে আওয়ামী লীগের ওই অবস্থা হয়েছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ছাত্র-জনতার রোষানলে শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। এখন গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কোথায়? ওই ভারতের দিল্লিতে। ব্রিটেন অস্বীকার করেছে ভিসা অনুমতি না দেওয়ার জন্য। ঠিক তেমনি আমেরিকা বলেছে, ভিসা দেবে না। কোনো দেশ রাজি হয়নি, ভারত যদিও এখন পর্যন্ত অফিশিয়ালি রাজি হয়নি, কিন্তু এখনো শেখ হাসিনা সেখানেই (ভারতেই) আছেন। ওখান থেকে শুরু করেছেন নতুন এক চক্রান্ত। এখন হিন্দু ভাইদের ঢাল হিসেবে আগে বাড়ায় দিয়েছেন। এটাই তাঁদের একটা কৌশল, অপচেষ্টা।

ফখরুল বলেন, ‘যখনই তারা (আওয়ামী লীগ) হারতে থাকবে, যখন জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নির্বাচনে হেরে যাবে, আন্দোলনে হেরে যাবে, তখন তারা হিন্দু ভাইদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে—এসব বলতে থাকবে। আমাদের এখানে হিন্দু মা-বোনেরা-ভাইয়েরা আছেন, তাঁরা ভালো করে জানেন, এই বাংলাদেশে কখনই হিন্দু-মুসলমান যুদ্ধ হয় না। দিনের পর দিন হাজার বছর ধরে এই বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান একসঙ্গে এক গাছে অনেক ফুলের মতো ফুটে রয়েছে। এই সম্পর্কে তারা ফাটল ধরাতে চায়। তারা প্রমাণ করতে চায় এই বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার করছে, নির্যাতন করছে। তারা এমনভাবে এটাকে ছড়াতে চায় যে তারা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে হেয়প্রতিপন্ন করতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, দেশে যখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়, তখন একটা গোলযোগ হয়। তবে সেই গন্ডগোল কোনো দিনই ধর্মীয় নয়, সেটা রাজনৈতিক।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার খুব খারাপ লেগেছে যখন দেখেছি, বিজয় সরণির সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তিটা ছিল, অসংখ্য মানুষ সেই মূর্তিকে দড়ি বেঁধে টেনেহিঁচড়ে ফেলে দিচ্ছে। খারাপ লেগেছে। কারণ, তিনি তো আমাদের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় শেখ মুজিবের বিরাট ভূমিকা ছিল। এই লোককে শেখ হাসিনা কত ছোট করে ফেলল, জনগণ আজ তাঁর মূর্তি নামিয়ে ফেলছে। এ জন্য সম্পূর্ণভাবে শেখ হাসিনা দায়ী।’

সমাবেশে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা আমাকে কথা দেন, আপনারা আমাদের হিন্দু ভাইদের পাশে থাকবেন। যেকোনো হামলা আসুক, আপনারা তা মোকাবিলা করবেন। আজকে যদি অন্য কেউ ষড়যন্ত্র করে, সেই ষড়যন্ত্রকে আপনারা রুখে দেবেন।’

এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন, জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মাহেবুল্লাহ আবুনুরসহ জেলা, উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন।