প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর আত্মগোপনে চলে যান পাবনার ঈশ্বরদীতে বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধি। কার্যালয় ছাড়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাঁদের অনেকেই এখনো কার্যালয়ে ফেরেননি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যানরা ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তবে, চলতি বছরের ২১শে এপ্রিল সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদশূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে এখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে শহীদুল ইসলাম বগা দায়িত্ব পালন করছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর থেকেই গা-ঢাকা দেন সাহাপুর, লক্ষ্মীকুণ্ডা, পাকশী, মুলাডুলি, দাশুড়িয়া, সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া ৭টি ইউনিয়নেরই অনেক ইউপি সদস্যও রয়েছেন আত্মগোপনে। সেইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে অনেকের মোবাইল ফোন।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পরিষদে না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া বিভিন্ন সনদ ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের মতো নাগরিক সেবা কার্যক্রম। সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ পড়েছেন চরম বিপাকে।
ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সেবা প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিষদে চেয়ারম্যান না থাকায় তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকলে বেশির ভাগ সেবা তৎক্ষণাৎ পাওয়া যেতো। অনুপস্থিত থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি যেখানে বলছেন সেখানে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি যেমন বেড়েছে, সেই সঙ্গে খরচ হচ্ছে বাড়তি অর্থ ও সময়।
পাকশী ইউনিয়নের চররূপপুর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, বোনের মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য ইউপি কার্যালয়ে যান তিনি। পরিষদ থেকে অনলাইনে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর প্রয়োজন। চেয়ারম্যান কার্যালয়ে না থাকায় তার বাড়িতে গিয়ে স্বাক্ষর নিতে হবে। জনদুর্ভোগ নিরসনে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দ্রুত কার্যালয়ে ফেরার দাবি জানান তিনি।
সাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমলাক হোসেন বাবু বলেন, পরিষদে উপস্থিত থাকতে না পেরে কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে, বাড়ি থেকেই যতদূর সম্ভব সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। থানা পুলিশের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হলে পরিস্থিতি বুঝে পরিষদে উপস্থিত হবেন বলেন জানান তিনি।
দাশুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বকুল সরদার জানান, ৫ তারিখের পর গত সোমবার প্রথম পরিষদে এসেছেন তিনি। তবে, হামলা-আতঙ্কে তার পরিষদের অনেক সদস্য এখনো পরিষদে আসতে পারছেন না।
এ বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক কারণে হয়তো অনেকে যাচ্ছেন না। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। চেয়ারম্যান, সচিব, মেম্বার সবার জন্যই নির্দেশনা একই। যারা যাচ্ছেন না আমি উনাদের সঙ্গে কথা বলবো, যেন তারা নিয়মিত কার্যালয়ে যান।