বড় দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, বেড়েছে লোডশেডিং

প্রতীকী ছবি

মহিউদ্দিন: গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে না। ফলে উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এর মধ্যে কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র। একই কারণে বন্ধ আছে ভারতের ঝাড়খন্ডে নির্মিত আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট। এতে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। দুই দিন ধরে ঢাকার বাইরে বেড়েছে লোডশেডিং।

দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার মেগাওয়াট। তিন দিন ধরে দেশে লোডশেডিং বাড়তে শুরু করেছে। এ সময় দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা হয়েছে ঘণ্টায় প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি হয়েছে দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগপর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় এমন চিত্র দেখা গেছে। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো গ্রামে দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ভুগছে মানুষ।

কয়লাচালিত ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট নিয়ে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র। গড়ে তারা প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট করে সরবরাহ করছিল। বুধবার আদানির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার কারিগরি কারণে একটি ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন দিনে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। দ্রুত সমস্যা সমাধানে কাজ করছে তারা। উৎপাদনে ফিরতে আরও এক মাস লাগতে পারে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, কয়লাচালিত মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে। কারিগরি ত্রুটির কারণে ১০ আগস্ট বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন।

দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি থেকে আসে ১১০ কোটি ঘনফুট। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল গত ২৭ মে থেকে বন্ধ। অ্যাকসিলারেটর এনার্জির টার্মিনাল থেকে এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ৬০ কোটি ঘনফুট। দিনে এখন গ্যাস সরবরাহ নেমে এসেছে ২৬০ কোটি ঘনফুটে। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ নেমে এসেছে ৯০ কোটি ঘনফুটের নিচে, যা সর্বোচ্চ ১২০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছিল। আড়াই মাস আগেও গ্যাস থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা হতো। এখন হচ্ছে ৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি।

পিডিবির সদস্য (বিতরণ) মো. রেজাউল করিম  বলেন, ঘাটতি থাকায় ঢাকা শহরের আশপাশ এলাকায় ও ঢাকার বাইরে লোডশেডিং হচ্ছে। এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়বে। আদানি চালু হতে আরেকটু সময় লাগবে। তবে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে শনিবার ও দ্বিতীয় ইউনিট থেকে রোববার উৎপাদন শুরুর কথা। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)। এ দুটি সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, গতকাল ডিপিডিসির সর্বোচ্চ চাহিদা ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট হয়েছে, সরবরাহের ঘাটতি নেই। আর ১ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট চাহিদার পুরোটা পেয়েছে ডেসকো।

ভোগান্তি বেশি ঢাকার বাইরে
ঢাকার বাইরে শহর এলাকায় কিছু কিছু লোডশেডিং হচ্ছে। তবে বেশি হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার কুমারগাতা ইউনিয়নের খামারি ছদরুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে মুরগি মারা যেতে পারে। জেনারেটর চালাতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

সিলেট নগর ও জেলার ১৩টি উপজেলার অন্তত ১৭ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা বললেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে তাঁরা অতিষ্ঠ। বুধবার রাতে সিলেট নগরের ব্রাহ্মণশাসন এলাকায় পাঁচ থেকে ছয়বার লোডশেডিং হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই এলাকার বাসিন্দা সুপ্রিয় মজুমদার। 

ফরিদপুরে শহর ও গ্রাম মিলে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাচ্ছে ১৩০ মেগাওয়াট। এতে ১৫–২০ শতাংশ ঘাটতি মেটানো হচ্ছে লোডশেডিং দিয়ে।