সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্দ্রী সোহেল তাজ এ কথা বলেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনীতিতে ফেরার কোনো ইচ্ছা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ। তার বিবেচনায় এখনকার রাজনীতি ‘পচা, নোংরা ও জঘন্য’।
‘গভীর রাতে একজন অনুসরণ করছে’ বলে ফেইসবুকে পোস্ট করার পরদিন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমার কথা স্পষ্ট, আমি এই নষ্ট, পচা জঘন্য রাজনীতিতে আসব না। নষ্ট কালচারে আমি আসতে ইচ্ছুক না। আমি রাজনীতিতে ফিরব না। আমি বারবার বলেছি রাজনীতিতে আসার আমার কোনো আগ্রহ নাই। বেশ কিছু ধরে হত্যার হুমকি পাচ্ছেন জানিয়ে সোহেল তাজ বলেন, “একটি পরিবর্তনের জন্য শত শত প্রাণের বিনিময়ে অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আজকের অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে৷ এই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি৷ আমরা চাই একটি গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধশালী প্রগতিশীল বাংলাদেশ৷ আমাদের বংশধর, নাতি নাতনিসহ সবাই যেন একটি সুন্দর বাংলাদেশ পায় সেই প্রয়াসেই এই আত্মগোপন৷ ছাত্র জনতার এই অভ্যুত্থান।'
ব্যক্তিগতভাবে এই সরকারের সাফল্য কামনা করছেন জানিয়ে সোহেল তাজ বলেন, 'আমি মনে করি যে কোনো ভালো কাজ কিংবা রাষ্ট্র সংস্কারের কাজের জন্য আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি করা বড় একটি অংশ৷ সুশাসন পেতে হলে আইনের শাসন জরুরি৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার একটি বিষয় নিয়ে এখানে এসেছি৷ আমাকে বেশ কিছুদিন যাবত বিভিন্ন মহল থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ আমার প্রাণের উপর হুমকি এসেছে।'
মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে সোহেল তাজ ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে গাজীপুর-৪ আসন (কাপাসিয়া) থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সোহেল তাজ।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আবার জেতার পর তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন। তবে অভিমান করে মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেন। সেই থেকে রাজনীতির বাইরে আছেন তিনি। একাধিকবার তিনি রাজনীতিতে ফিরছেন বলে গুঞ্জন ছড়ালেও সেটি সত্য হয়নি।
বর্তমানে শরীর চর্চায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন সোহেল তাজ। তার আসনে পরে আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য হন বোন সিমিন হোসেন রিমি, যিনি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
নিজেকে ‘একজন সাধারণ নাগরিক’ উল্লেখ করে সোহেল তাজ বলেন, 'আমার আরেকটি পরিচয় আছে আমি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সন্তান৷ আমি সাধারণভাবে চলার চেষ্টা করলেও এই পরিস্থিতিগুলো আমাকে ছাড়ছে না৷ আমার অধিকার আছে সাধারণ নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার।'
কারা ফলো করেছে বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমি বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানিয়েছি এবং সেনাবাহিনী প্রধানের কাছে জানাব৷ আমি সেনাবাহিনীর প্রধানের কাছে অনুরোধ করব, যে গেট দিয়ে ঢুকেছিলাম ওই গেটে হাই রেজুলেশনের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে৷ আমার বিশ্বাস আমাকে যে মোটরসাইকেল ফলো করেছিল তার লাইসেন্স বের করে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব, সেনাপ্রধান যদি চান৷ আমি গতকাল রাত ১০ টা ৫১ মিনিট থেকে ৫৬ মিনিটের মধ্যে সেখানে প্রবেশ করেছিলাম।'
কী হয়েছিল
আগের রাতে কী হয়েছিল, সে বিষয়ে ফেইসবুকেই পোস্ট দিয়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। সেই ঘটনার বর্ণনা করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'গতকাল (বুধবার) আমি যখন কাজ শেষ আমার ডিওএইচএস-এর বাসায় ফেরত যাচ্ছিলাম, তখন একটি মোটরসাইকেল চালক আমাকে ছায়ার মত ফলো করে৷ আমি যখন সেনানিবাস দিয়ে ঢুকে যাই, তখন তিনি আমাকে থামতে বলেন৷ আমি দেখি তার শার্টের মধ্যে লাল-নীল লাইট জ্বলছে৷ তিনি আমাকে ইশারা করছেন থামতে৷ আমি বুঝতে পারছিলাম না তিনি কে? সাধারণত ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে এমপিরা (মিলিটারি পুলিশ) থামায়৷ আমাকে থামানোর পর আমি তাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করি, ‘আপনি কে? আপনার পরিচয় কী? আমাকে কেন থামতে বলেছেন?’ উনি বারবার আমাকে বলছেন, ‘আমাদের লোক আসবে৷ আপনার থামতে হবে৷’ এক পর্যায়ে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আপনি সোহেল তাজ৷ এরপর আমি আরও পাজলড হয়ে গেলাম৷ এরপর আমি তাকে ফোনে বলতে শুনেছি 'উনি জাহাঙ্গীর গেইট দিয়ে ঢুকে গিয়েছেন৷ আপনারা এখানে এই লোকেশনে আসেন।'
সোহেল তাজ বলেন, 'আমি তাকে বারংবার তার পরিচয় জানতে চাইলাম৷ সে কোনো সদুত্তর দিল না৷ এরপর তিনি আবার ফোনে কথা বলে আমাকে বললেন, ‘আপনি চলে যেতে পারেন৷ আমি যেটা উপলব্ধি করতে পেরেছি, সে যে ব্যক্তির সাথে কথা বলছিল, তারা অন্য স্থানে অবস্থান নিয়েছিল৷ তারা ভেবেছিল আমি হয়ত মহাখালী দিয়ে যাব।'
অঘটন ঘটাবার পরিকল্পনা ছিল দাবি করে তিনি বলেন, আমি আজকে এই বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবহিত করতে এসেছি৷ আমি মনে করি বাংলাদেশের সকল নাগরিকের ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার আছে৷ আমি তাকে বলেছি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অতি দ্রুত উন্নতি করেন৷ তিনি বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন৷ এক ভাগনাকে অপহরণ করে ১১ দিন ‘আয়না ঘরে’ রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী৷
তিনি বলেন, আমি নিজে আমার গাড়ি চালাই৷ আমি চেষ্টা করি একজন সাধারণ মানুষের মত চলাফেরা করার৷ আমার একটি ফিটনেস সেন্টার রয়েছে সেখানে কাজ করি আমি আমার দিন চালাই৷ আমি যখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলাম তখন আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব নীতি, আদর্শ ও সততার সাথে পালন করেছি৷ আমি অন্যায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম এবং পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেছি৷ পরবর্তীতে আমি পদত্যাগ করার পরেও সময় সময়ে আমার ওপর নানা কিছু করা হয়েছিল৷ ২০১৩ সালে আমার এক ভাগিনা রাকিবকে নিয়ে পুলিশ নির্যাতন করেছিল, সেটা নিয়েও মামলা হয়েছিল৷ পরবর্তীতে ১৯ সালে আমার এক ভাগনাকে অপহরণ করে এই আয়না ঘরে ১১ দিন রাখা হয়েছিল৷ আমি সে সময়েও গুম খুন এর প্রতিবাদ করেছিলাম৷ আমি অনেক কষ্ট এবং কায়দা করে সে সময় আমার ভাগনাকে উদ্ধার করে এনেছিলাম।'
তিনি বলেন, 'হত্যা, গুম এবং মানুষের অধিকারকে ‘বিলুপ্ত করা’ আমি কখনই সমর্থন করিনি৷ কারণ আমারও নিরাপত্তার বিষয় ছিল।'