আউটসোর্সিং, প্রকল্প ও চুক্তিভিত্তিক কর্মরতদের রাজস্বভুক্ত না করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এসব লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বেশির ভাগই আজ প্রথমবারের মতো এমন দাবিদাওয়া নিয়ে সচিবালয়ের সামনে এসেছেন। আবার কিছু সংগঠনের ব্যানারে আসা মানুষ জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দাবিদাওয়া জানালেও তা কার্যকর হয়নি। তাই নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তাঁদের দাবি তুলে ধরার জন্য এসেছেন।
বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে সচিবালয়ের সামনের সড়কে কখনো কখনো অল্প সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবার কখনো কখনো যান চলাচলের গতি ধীর হয়। সচিবালয়ের নিরাপত্তায় এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যের সেখানে উপস্থিতি ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠন দাবিদাওয়া নিয়ে সচিবালয়ে এ ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন।
আজ যেসব সংগঠন এ ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় জমায়েত ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। বেলা ১১টার সময় শতাধিক শিক্ষার্থী রামপুরা থেকে আউটসোর্সিং, প্রকল্প ও চুক্তিভিত্তিক কর্মরতদের সরকারি চাকরিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ না দেওয়ার দাবি নিয়ে আসেন সচিবালয়ের সামনে। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। তাঁদের অবস্থানের কারণে কিছুক্ষণের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে তাঁদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে যায়। মন্ত্রণালয়ের সচিব তাঁদের দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দেন বলে জানান তাঁরা।
সবুজ আলী নামে একজন আন্দোলনকারী বলেন, ‘আউটসোর্সিং, প্রকল্প ও চুক্তিভিত্তিক কর্মরতদের রাজস্বভুক্ত করলে আমরা জায়গা পাব না। যিনিই রাজস্বতে আসবেন, তাঁকে পরীক্ষা দিয়ে আসতে হবে।’
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ‘শিক্ষা উপদেষ্টা কার্যালয়ের অভিমুখে মিছিলসহ পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেন বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি। বেলা ২টার দিকে তারা এই কর্মসূচি পালন করে। সচিবালয়ের সামনে তারা টানা চতুর্থ দিনের মতো এই কর্মসূচি পালন করছে।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের মেরিটে (মেধায়) দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে চার দফা দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছেন গুচ্ছভুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের কিছু শিক্ষার্থী।
অ্যাম্বুলেন্সের বেসরকারি মালিকেরাও ছয় দফা দাবিতে আজ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। তাঁদের দাবির মধ্যে রয়েছে সেবা খাতে অ্যাম্বুলেন্স নিবন্ধন দেওয়া, অ্যাম্বুলেন্সের জাতীয় নীতিমালা করা, টোল ফ্রি করা, হাসপাতালে পার্কিং সুবিধা দেওয়া, দ্রুত গ্যাস দেওয়া, সড়কে হয়রানি বন্ধ করা। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু দাবি মানা হয়নি।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আওতাধীন শিশু বিকাশ কেন্দ্রের সব শিক্ষক ও কর্মচারীরাও তাঁদের বকেয়া বেতন ও চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ন্যূনতম মজুরি কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)। এরপর তাঁরা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেন।
সচিবালয়ের সামনে নানা দাবিতে অন্তত ১২টি সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান যেন কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয় এমন দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন।
করোনা মহামারির কারণে ভুক্তভোগী এবং এনটিআরসিএর প্রকাশিত পঞ্চম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ বঞ্চিতরা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তাঁরা আরেকবার বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চান।
বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরে কর্মরত ২৯ জন অস্থায়ী কর্মচারীর অনতিবিলম্বে অনুমোদিত শূন্য পদের বিপরীতে স্থায়ীকরণের দাবিতে অধিদপ্তরের কর্মচারীরা মানববন্ধন করেন।
বাংলাদেশ ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে আন্দোলন করেছেন কিছু মানুষ। আজকেই প্রথম তাঁরা এ ধরনের কর্মসূচি পালন করলেন। তাঁরা দাবি করেন, নন বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) দন্ত চিকিৎসকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি বৈষম্যহীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর গঠন ও চিকিৎসক কর্মকর্তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে পরিবার পরিকল্পনা সরকারি চিকিৎসক সমিতির ব্যানারে প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ‘জীবিকার জন্য মহিলাদের দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ’ কর্মসূচিটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়। দেশের সব জেলা পর্যায়ে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এই প্রশিক্ষণ চলছে।